আমুদরিয়া নিউজ : আপনি যদি কোনওদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখেন আপনার মাথার সব চুল বালিশে ঝরে পড়ে আছে, পুরো মাথায় আর একটিও চুল নেই। ভাবলেই কান্না পাচ্ছে তাই না। এবার ভাবুন ১৫ টি গ্রামের শত শত মানুষের সাথে রাতারাতি এমনটাই ঘটছে। ঘটনাটি ২০২৪ এর ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ঘটেছিল।
এক অদ্ভুত ও ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে মহারাষ্ট্রের বুলধানায়। সেখানে ৪ থেকে ৭০ বছর বয়সী ৩০০ জনেরও বেশি গ্রামবাসী এক বিরল রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু শুধু চুল পড়াই নয়, তাঁদের ত্বকে ফুসকুড়ি উঠছিল, নখ ভেঙে গিয়েছিল, শরীরেও চরম দুর্বলতা দেখা দিয়েছল। গ্রামজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। স্কুল বন্ধ ছিল, বিয়ে স্থগিত রাখা হয়েছিল। গ্রামবাসীরা এক নতুন ভয়ে রাত কাটাচ্ছিল। কারোর জানা ছিল না এমনটা কেন হচ্ছে, এর থেকে কিভাবে রেহাই পাওয়া যাবে। অনেকের সন্দেহ ছিল যে পানীয় জলের জন্যেই হয়ত এমনটা হচ্ছে। কিন্তু জল পরীক্ষা করার পর দেখা যায় পানীয় জলেও তেমন কিছুই নেই। ফলে তাঁদের ভয় আরও বেড়ে যায়।
বিষয়টির কারণ যেভাবে জানা গেল
পদ্মশ্রী পুরস্কারপ্রাপ্ত ডঃ হিম্মতরাও বাওয়াস্কর, যিনি বিছের কামড়ের চিকিৎসায় তাঁর কাজের জন্য বিখ্যাত। তিনি জল দূষণের বিষয়টিতে বিশ্বাসী ছিলেন না। আসল কারণ জানতে তিনি একমাস ব্যাপী নানান পরীক্ষানিরীক্ষা শুরু করেন। নিজস্ব পুঁজি থেকে ৯২,০০০ টাকা খরচ করে ল্যাব পরীক্ষা করেন। তিনি গ্রামবাসীদের চুল, রক্ত, মূত্র, নখ এবং খাবারের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেন।
আসল অপরাধী কে?
দীর্ঘদিনের পরীক্ষায় অবশেষে জানা যায় ঘটনার পেছনের আসল কারণ সেলেনিয়াম নামের একটি পদার্থ। এর উৎস ছিল গমের আটার মতো সাধারণ কিছু খাবার। ভাত ও রুটি প্রায় প্রতিটি পরিবারের একটি প্রধান খাদ্য। গ্রামবাসীরা অজান্তেই তাদের দৈনন্দিন খাবারের মাধ্যমে বিষাক্ত মাত্রায় সেলেনিয়াম গ্রহণ করছিল। জানা গিয়েছে গমগুলি পাঞ্জাব থেকে পাবলিক ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়েছিল।
সাধারণত, সেলেনিয়াম অল্প পরিমাণে শরীরে গেলে উপকার করে। কিন্তু, অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করলে তা ক্ষতিকারক হয়ে ওঠে। এর অত্যধিক মাত্রা শরীরের উপর বড়ো বিপদ ডেকে আনতে পারে যার ফলে চুল পড়ে যায়, নখ ভেঙে যায়, ত্বকে ব্যথা সমেত ফুসকুড়ি দেখা দেয় এবং এমনকি নার্ভের ক্ষতিও হতে পারে।
ডঃ বাওয়াস্করের অনুসন্ধানের পরে কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়। দূষিত গম পাঠানো বন্ধ করে তদন্ত শুরু করা হয় এবং সারা দেশে মজুত গম পরীক্ষা করা হয়। ওই গ্রামবাসীরা গম খাওয়া বন্ধ করে দেওয়ায় রেহাই পান। তাঁদের নতুন চুল গজাতে শুরু করে। তবে, এই সংকট ভারতের খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থার একটি বড় ফাঁক বের করেছে। যদি এক টুকরো গম এই বিপদ ঘটাতে পারে, তা হলে আর কতগুলো খাবার এমন অপরীক্ষিত থাকবে। প্রশ্ন ওঠে, মানুষের জন্য রেশন বিতরণের আগে কি ভাল করে পরীক্ষা করা উচিত নয়? তাই অনেকেই খাবারের গুনগত মান পরীক্ষা ও তাতে কি কি মিশে রয়েছে তা বোঝার জন্য যাতে কোনও যন্ত্র তৈরি হয় তার দাবি জানান।