এ এক ভীষণ দুশ্চিন্তার ব্যাপার!
যা নিয়ে দুশ্চিন্তা, তা আবার হাতের নাগালে নেই। সে সবই মহাকাশে। ফলে, কোনও দেশের পুলিশ-প্রশাসন বা বিশেষজ্ঞদের তেমন কিছু করার নেই এখনই।
ব্যাপারটা হল, পৃথিবীর নানা দেশ থেকে মহাকাশ গবেষণার উদ্দেশ্যে বহু কৃত্রিম উপগ্রহ এবং মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করা হয়। তার মধ্যে কোনগুলো ফিরে আসে পৃথিবীর বুকে, তবে কোনগুলো যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে অথবা পরিকল্পনাজনিত ভুলের কারণে থেকে যায় মহাকাশেই। এবং তা ঘুরপাক খায়। বলা ভাল ঘুরপাক খেতেই থাকে।
কখনও ভেবে দেখেছেন কি এইসব বিশাল যন্ত্রাংশের কি হয়? বা কোথায় যায় এগুলো? আসলে, এগুলো যন্ত্র, যত ছোটই হোক না কেনো, কখনোই সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে যায় না। এমনকি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর স্ক্রুও ভেসে বেড়ায় মহাকাশে। এইসব যন্ত্রাংশ ঘুরে বেড়ায় পৃথিবীর চারপাশে।
এখন কথা হচ্ছে – এইসব যন্ত্রাংশ কি তবে আমাদের পাঠানো সক্রিয় উপগ্রহগুলির সাথে ধাক্কা খাবে?
উত্তরটা হলো- হ্যাঁ। এমনকি ধাক্কা খাওয়ার পর, সক্রিয় স্যাটেলাইটটি বিকল হয়ে যাবে। এ ছাড়াও বড় বিস্ফোরণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এরকম সংঘর্ষ প্রথম ঘটেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার দুটো উপগ্রহের মধ্যে।
আর যদি ভেবে থাকেন যে একটি সক্রিয় কৃত্রিম উপগ্রহ ধ্বংস হলে কিছুই হবে না, তবে ভুল ভাবছেন। এই যে আমরা দৈনন্দিন জীবনে এত সুযোগ সুবিধা ঘরে বসে হাতের কাছে পাই, তার কৃতিত্ব কিন্তু এইসব উপগ্রহের। রোজ ঘরে বসে মোবাইল ফোনে সব তথ্য পেয়ে যাওয়া, অচেনা রাস্তায় গুগল ম্যাপ ব্যবহার করা, ইন্টারনেট ব্যবহার করা, সামাজিক মাধ্যমে সময় কাটানো, আরও কত কি! এইসব কিন্তু বন্ধ হয়ে যেতে পারে উপগ্রহ ব্যবস্থায় ত্রুটি হলে।
এই তো কদিন আগে কেনিয়ায় একটা বিশাল ধাতব চাকা এসে পড়েছে লোকালয়ের অদূরে। জঙ্গলে। মনে করা হচ্ছে সেটিও কোনও মহাকাশযানের অংশ।
তাই দুশ্চিন্তার আরেকটি দিক হল, যদি কখনও এইসব উপগ্রহের অংশবিশেষ নেমে আসে পৃথিবীর বুকে? কি হবে তা হলে?
মহাকাশ নজরদারি নেটওয়ার্কের (এসএসএন) তথ্য থেকে জানা যায়, পৃথিবীর চারপাশে পরিক্রমণকারী বড় আকারের ধ্বংসাবশেষের সংখ্যা প্রায় ১৩ হাজার এবং ছোটগুলোর সংখ্যা ৭ লাখের কাছাকাছি।
মহাকাশবিজ্ঞানীদের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে কিভাবে এইসব আবর্জনা থেকে সচল উপগ্রহগুলিকে বাঁচানো সম্ভব! এখনো অবধি মহাকাশে পাঠানো কৃত্রিম উপগ্রহের সংখ্যা ৬০০০।
যার মধ্যে এখন কাজ করছে মাত্র ১০০০ টির মত। তবে ভবিষ্যতে যাতে আরও উপগ্রহ নষ্ট না হয়, তার জন্য এখনই জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। এমন কোনো প্রযুক্তি আবিষ্কার করতে হবে, যাতে ওইসব জঞ্জাল তুলে এনে তাদের ধ্বংস করে ফেলা যায়। তা হলেই বাঁচানো যাবে দামী সচল উপগ্রহগুলোকে।
এমন পদক্ষেপ নেওয়া এখনই সম্ভব নয়। এ বিষয়টি সমাধান করার জন্য গবেষণা চলছে। (Photo Source : AI)
প্রতিবেদক : সন্ধ্যা দত্ত
ইংরেজি অনার্সের স্নাতক। কনটেন্ট রাইটিংয়ে দক্ষ।
আমুদরিয়া নিউজ তাঁর প্রথম কর্মস্থল।