আমুদরিয়া নিউজ : বর্তমানে স্ক্রিনে স্ক্রোল করে গল্প পড়ার যুগে বই পড়ার নেশাটা কোথাও যেন হারিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু, যদি এই নেশা হারিয়ে না যায়? যদি আপনি পার্কে হাটতে হাটতে হাতের কাছে বই খুঁজে পান ? প্রকৃত বইপ্রেমী হলে আপনি কখনই নিজেকে আটকে রাখতে পারবেন না। ঠিক এই ভাবনা নিয়েই আহমেদাবাদের ২ কলেজ ছাত্র, হিত দোশি এবং ওম ঠক্কর ‘ইওর রিডিং সার্কেল’ উদ্যোগটি শুরু করেন।
এই লাইব্রেরি তৈরির কিছু ধাপ রয়েছে। দেখতে থাকুন,
১। পাঠকদের একটি গ্রুপ তৈরি করুন
আপনার মতোই যারা বই ভালোবাসেন তাদের সাথে যোগাযোগ করে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করুন। আপনারা চাইলে দেখাও করতে পারেন। হিত এবং ওম ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে এভাবেই শুরু করেছিলেন। আহমেদাবাদের পাঠকদের সাথে যোগাযোগ করে তাঁরা ‘ইওর রিডিং সার্কেল’ তৈরি করেন যেখানে সবাই একে অপরের সাথে বই এবং লেখকদের সম্পর্কে তাদের চিন্তাভাবনা ভাগ করে নিত।
২। আপনার শহরের সাথে মানানসই জায়গা থেকে অনুপ্রেরণা নিন
হিত এবং ওমের কলেজের বন্ধুরা কেরালার পেরুমকুলাম গ্রাম থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিল। সেখানে কয়েকশ মিটার দূরে ছোট ছোট পাবলিক লাইব্রেরি স্থাপন করা হয়েছে। এই মডেলটি দেখে তারা বুঝতে পেরেছিল যে তাদের শহরেও এমন কিছুই বানাতে হবে।
৩। এমন একটি পাবলিক স্পেস বেছে নিন যেখানে বেশি লোক জড়ো হতে পারবে
এমন একটি জায়গা বেছে নিন যেখানে শান্তিও থাকবে, সহজেই মিনি লাইব্রেরি খুজে পাওয়া যাবে আর মানুষ ভিড় করলেও বেশি শব্দ হবে না। আর যে কোনও ছোট-বড় পার্ক হল এর উপযুক্ত জায়গা।
৪। অনুমতি নিন
এই কাজে সময় লাগতে পারে। কিন্তু, এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনার স্থানীয় পৌরসভা বা পার্ক কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করুন এবং আপনার এই উদ্যোগের কথা জানিয়ে তাঁদের অনুমতি নিয়ে নিন।
৫। একটি মিনি লাইব্রেরি ডিজাইন করুন
এটিকে একটি বাক্সে একটি বইয়ের তাকের মতো বানান। যেখানে অন্তত ২৫ থেকে ৩০টি বই রাখা যাবে।
৬. নানান মানুষের বই দিয়ে লাইব্রেরিটি ভরে দিন
আপনার বন্ধুবান্ধব, পরিবার, প্রতিবেশী অথবা স্থানীয় সংস্থাগুলিকে বই দান করতে বলুন। তাঁরা যখন জানবেন যে তাদের বইগুলো সবার পছন্দ হচ্ছে এবং বহু মানুষ তা পড়ছে তখন তারা সাধারণত খুশি মনে বই দিতে রাজিই হবেন। হিত ও অম প্রথমে নিজেদের ঘরে থাকা বই দিয়েই তাঁদের বানানো বইয়ের তাকটি ভরেছিল। পড়ে অনেকেই সেই লাইব্রেরিতে বই রেখে যেতেন।
৭। স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের আহ্বান জানান
প্রতিটি লাইব্রেরির কিছুটা যত্নের প্রয়োজন। প্রতিটি লাইব্রেরিতে দুজন স্বেচ্ছাসেবক থাকে যারা কাছাকাছি থাকে, তারা নিয়মিত পরিদর্শন করে সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারে।
৮। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে এই উদ্যোগের কথা সবাইকে জানান
যারা তাদের বই দান করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য অনলাইনে ছবি, লেখার পোস্ট শেয়ার করুন। এটা আরও পাঠক, স্বেচ্ছাসেবক এবং বই দাতাদের আকৃষ্ট করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। পোস্ট ভাইরাল হলে অনেকেই বই পড়তে আসবেন, আবার অনেকেই বই দিতে চাইবেন। আজ হিত এবং ওমের এই উদ্যোগ তাঁদের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের মাধ্যমে আমেরিকা, কানাডার মতো দেশেও পৌঁছে গিয়েছে। তাঁরা আহমেদাবাদে ৫ টি মিনি লাইব্রেরি বানিয়েছেন। যেখানে প্রতিদিন বহু মানুষ বিনামুল্যে বই পড়ার আনন্দ উপভোগ করেন।