আমুদরিয়া নিউজ : ইংল্যান্ডের অভিজাত বিপণী হল হ্যারডস। ক্রমশ যে সংস্থা আবুধাবি, প্যারিস সহ নানা দেশে শাখা খোলে। সেই হ্যারডসের মালিক মহম্মদ আল ফায়েদ এক বছর আগে মারা গিয়েছেন। কিন্তু, তাঁর বিরুদ্ধে মারাত্মক যৌন অত্যাচারের অভিযোগ উঠেছে। একটা, দুটো নয়। শতাধিক অভিযোগ। কিশোর থেকে যুবতী, বয়স্কা, অনেকেককেই ফায়েদ ধর্ষণ করেছেন বলে অভিযোগ সামনে এসেছে।
যে কাহিনী শুনলে যেমন শিউরে উঠতে হয়। তেমনই ক্রোধ জমা হয় মনের মধ্যে। কিটন স্টোন নামে এক প্রেমিকের জন্যই এমন মারাত্মক সব অভিযোগ সামনে এসেছে। যা নিয়ে তথ্যচিত্র হয়েছে। সেখানে ৫ জন নির্য়াতিতা সরাসরি তাঁদের উপরে কীভাবে কবে, কোথায় ফায়েদ যৌন অত্যাচার করেছেন দিনের পর দিন সেটা বর্ণনা করেছেন। কেন তাঁরা চুপ করেছিলেন সেটাও বলেছেন। বহু কোটি টাকার মালিক ফায়েদের বিরুদ্ধে কোনও প্রতিবাদ করে লাভ হবে না এটা ভেবেই তাঁরা এতদিন চুপ করেছিলেন।
কিন্তু, কিটন স্টোন চুপ করে বসে থাকেননি। তাঁকে তাঁর প্রেমিকা হ্যারডসের মালিকের সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। ডেটিংয়ের সময়ে একদিন প্রেমিকা তাঁকে জানান, হ্যারডসের মালিক তাঁকে দিনের পর দিন যৌন নির্যাতন করেছেন, এমনকী, একদিন ধর্ষণও করেছেন। যা শোনার পরে কিটন কাজে নেমে পড়েন। হ্যারডসের যে সব শাখা রয়েছে, সেখানকার মহিলাদের সঙ্গে আলাদা করে কথাবার্তা বলতে শুরু করেন। তা রেকর্ড করতে থাকেন। ধীরে ধীরে তিনি বুঝতে পারেন, ফায়েদ তাঁর সংস্থার মহিলা কর্মীদের উপরে লাগাতার অত্যাচার করছেন।
সে সময়ে হ্যারডসের পরিচালন কর্তৃপক্ষ ফায়েদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি। অভিযোগগুলো ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টাই করেছেন। কিটন জানান, তাঁর স্ত্রী ১৯ বছর বয়সে হ্যারডসে যোগ দেন। ২০১৮ সালে তাঁর প্রেমিকা তাঁকে জানান যে আল ফায়েদ তাঁকে যৌন নিপীড়ন, এমনকি ধর্ষণ করেছেন।
এর পরেই শুরু হয় তদন্ত। তথ্যচিত্রও তৈরি হতে থাকে। তাঁর প্রেমিকা ১৯৮৮ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত কাজ করেন। এ সময় আল ফায়েদ তাঁকে একাধিকবার ধর্ষণের চেষ্টা করেছেন। একবার ধর্ষণ করতেও সক্ষম হন। অফিসের ভেতরে বাইরে সব জায়গায় তাঁকে বিরামহীনভাবে যৌন হয়রানি করতেন তিনি। ব্যক্তিগত হেলিকপ্টার ও বিমানের মধ্যেও যৌন হয়রানি করতেন তিনি।
কিটন জানার চেষ্টা করেন, ধর্ষণ ও নিপীড়নের শিকার কর্মীরা কেন প্রতিষ্ঠানটি ছেড়ে চলে যাননি?
জানতে পারেন, তাঁদের হুমকি দিযে চুপ করানো হয়। আল ফায়েদের যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণের সব ঘটনা ঘটেছে লন্ডন, ফ্রান্সের প্যারিস ও সেন্ট ত্রোপেজ এলাকা এবং সৌদি আরবের আবুধাবিতে। নির্যাতিতা নারীদের আইনজীবী ব্রুস ড্রামমন্ড সংবাদ সংস্থাকে জানান, হ্যারেডসের ভেতরে দুর্নীতি ও নিপীড়নের যে জাল বোনা হয়েছিল, তা ছিল ভয়ঙ্কর অন্ধকারময়।
একজন হ্যারডস কর্মী জানান, লন্ডনের পার্ক লেনের একটি বাসায় তাঁকে ধর্ষণ করেছিলেন ফায়েদ। লন্ডনের মে ফেয়ার এলাকার আরেক কর্মীও ফায়েদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনেছেন। ঘটনার সময় তিনি ছিলেন একজন কিশোরী। ওই নারী বলেন, ফায়েদ একজন রাক্ষসের মতো ছিলেন। হ্যারডসের সব কর্মী তাঁর কাছে খেলনার মতো বলে তিনি মনে করেন।
আল ফায়েদ ২০২৩ সালের অগস্টে মারা যান। এখন তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা শুরু হয়েছে।