আমুদরিয়া নিউজ : ‘ফ্লোরা’ আর বুনো ফুলে ঘেরা অরুণাচল প্রদেশ। অরুণাচলের এই প্রাকৃতিক পরিবেশকেই নিজের কাজের সাথে জুড়ে দিয়ে ফিল্মমেকার হিসেবে স্বতন্ত্র পরিচয় গড়ে তুলেছেন ক্যারি পাড়ু। উপজাতি সম্প্রদায়ের এই তরুণী অরুণাচলের সামাজিক ইস্যুগুলি তুলে ধরেছেন তাঁর ক্যামেরার লেন্সে। তবে শুরুর পথটা ছিল একটু অন্যরকম। কীভাবে মোড় ঘুরলো তাঁর কর্মজীবনের গতিপথের, তাই নিয়েই আজকের গল্প।
স্কুল লাইফে ক্যারি চাইতেন জার্নালিস্ট হতে। স্কুল শেষ করে শিলং যান। আর ছোটবেলার স্বপ্ন পূরণের তাগিদে মাস কমিউনিকেশন অ্যান্ড জার্নালিজম নিয়ে ভর্তি হন সিকিম মণিপাল ইউনিভার্সিটিতে। সেখান থেকেই একে একে বিভিন্ন মিডিয়া হাউজে শুরু করেন ইন্টার্নশিপ। ক্যারির মাথায় তখন ঘুরপাক করছে নতুন নতুন চিন্তা, আর চিন্তার পরিধি বাড়তেই নতুন উপলব্ধি। ছোটবেলায় যে ক্যারি চেয়েছিলেন একজন জার্নালিস্ট হতে, সেই ছোট্ট ক্যারির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার সাথে এখনকার ম্যাচিউর ক্যারির ভাবনা যেন খাপ খাচ্ছে না কিছুতেই। মিডিয়া হাউজে কাজ করতে করতে কিছু একটা খামতি অনুভব করেন। আরে! তাঁর একান্ত নিজস্ব চিন্তায় বাধ সাধছে স্টিরিওটাইপ মিডিয়ার খবর! বোঝা মাত্রই ক্যারি গ্রাজুয়েশন শেষ করে মুম্বাইতে দিলেন পাড়ি। ডিপ্লোমা করলেন সিনেমাটোগ্রাফিতে।
মুম্বইতে চার বছর থেকে, ‘রক অন-টু’-এর মত সিনেমায় ফ্রিল্যান্সিং, বিভিন্ন অ্যাড ফিল্ম ও ইন্ডিপেনডেন্ট ফিল্মে অ্যাসিস্ট করার পর ২০১৭ তে অবশ্য শেকড়ের টানেই ফিরে আসেন অরুণাচলে। ২০১৮ তে ‘দ্য ওয়াইল্ড ফ্লাওয়ার প্রোডাকশন’ নামে নিজের প্রোডাকশন হাউজ খোলেন ক্যারি। এক সাক্ষাৎকারে এই উঠতি ফিল্মমেকার জানান, বুনো ফুলের স্বভাবই হল লাগামহীন। ‘ফ্লোরা’ ও বুনো ফুল ঘেরা অরুণাচলের প্রাকৃতিক পরিবেশে মুগ্ধ হয়েই অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণভাবে তাঁর নিজস্ব হাউজের নাম নির্বাচন করেন। গোলাপ বা অন্য কোন ওভাররেটেড ফুলের পক্ষে যা সম্ভব নয়, সেই অসাধ্য সাধন করার ক্ষমতা রয়েছে একমাত্র বুনো ফুলের। কেননা এই ফুলগুলিই শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষার তোয়াক্কা না করে যে কোন প্রতিকূল পরিবেশে স্বমহিমায় ফুটে উঠতে পারে। একজন ক্রিয়েটিভ রাইটার, ফিল্মমেকার ও পরিচালক হিসেবে ক্যারিকেও এইসব বহু কাঁটা বিছোনো পথ পেরিয়ে আসতে হয়েছে। সৃজনশীলতার পরিপূর্ণ বিকাশ এভাবেই সম্ভব। তাই সেই অর্থে তাঁর হাউজের নামের সার্থক নির্বাচন।
ক্যারি তাঁর প্রোডাকশন হাউজ কবিতার মত ক্রিয়েটিভ কন্টেন্ট নিয়ে কাজ শুরু করেন। সেই পোয়েট্রি প্রোজেক্টের নাম ‘দ্য ভিভিড প্রোজেক্ট’। এই প্রোজেক্টে ৬ জন কবি মিলে বর্ণবিদ্বেষের মত অরুণাচলের সামাজিক ইস্যু গুলো নিয়ে আলোচনা করেন। ‘জুবান বুকস’-এর পডকাস্টে নর্থ-ইস্টের মেয়েদের নিয়েও কথা বলেন ক্যারি। অরুণাচলে বহুবিবাহ, প্রথাগত আইনের মত বিষয় নিয়ে তাঁর তৈরি তথ্যচিত্র ‘আই অ্যাম প্রোপার্টি’। নর্থ-ইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ডকুমেন্ট্রি অ্যান্ড ফিল্ম ফেস্ট-এ বেস্ট শর্ট ডকুমেন্ট্রির পুরস্কার পায় সেই ছবি।
বর্তমানে নর্থ-ইস্ট লিডার কানেক্ট-এর তরুণ চেঞ্জ-মেকারদের মধ্যে অ্যাসোসিয়েট মেম্বার ক্যারি। অনগ্রসর সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সমস্যা নিয়েই কন্টেন্ট ক্রিয়েট করে এগিয়ে যেতে চান স্কুল লাইফে জার্নালিস্ট হতে চাওয়া ক্যারি পাড়ু।
প্রতিবেদক : অন্তরা মোদক