আমুদরিয়া নিউজ : ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়, বয়স কোন বাধাই নয়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বহুবার প্রমাণ করে দেখিয়েছেন বহু গুণীজন। তাঁদের মধ্যে থেকেই জীবনের চার নম্বর সিঁড়ি পেরিয়ে হাতে তুলি ধরে পদ্মশ্রী সম্মান পান মধ্যপ্রদেশের জোধাইয়াবাঈ বৈগা। আজকের নারীশক্তির গল্প তাঁকে নিয়েই।
৭০ বছর বয়সে প্রথাগতভাবে ছবি আঁকা শিখে ৮৪ বছর বয়সে নামের আগে ‘পদ্মশ্রী’, মধ্যপ্রদেশের লোড়া গ্রামের উমারিয়া জেলার অনগ্রসর সম্প্রদায়ভুক্ত অশীতিপর জোধাইয়া আম্মার জীবনপথ মসৃণ ছিল না মোটেই। ৬ মাস বয়সে মাকে হারান। ১ বছর হতে না হতেই হারান বাবাকেও। এরপর বড় হওয়া তিন দাদার স্নেহের পরশে। চল্লিশে পৌঁছোতে না পৌঁছোতেই ৬ মাস অন্তঃসত্ত্বা থাকাকালীন স্বামীহারা হন। রুজি-রোজগারের তাগিদে করতেন শ্রমিকের কাজ। বড় হওয়ার সাথে সাথে স্বনির্ভর হয় ছেলেরা। এরপর একদিন কাজের জন্যই ছেলে মারফত জোধা আম্মাকে বাড়িতে ডেকে পাঠান বিখ্যাত চিত্রশিল্পী আশিস স্বামী। আর জীবন সায়াহ্নে এসে নিজেকে নতুন করে খুঁজে পান জোধাইয়া।
জোধাইয়া প্রথমেই অকপটে স্বীকার করে নেন তিনি লেখাপড়া জানেন না। এত বড় মাপের চিত্রশিল্পীর বাড়িতে কাজ করার যোগ্যতাই নেই তাঁর। একথা শুনে আশিস স্বামী তাঁকে মেঝেতেই কাঠের সরু একটি ছড়ি দিয়ে কিছু আঁকতে বলেন। আর সেই নির্দেশ মেনেই সবজি আঁকা শুরু করেন আম্মা। এরপর সেই ছড়ি হাত স্পর্শ করে তুলি। আর মেঝে থেকে কাগজ, কাগজ থেকে ক্যানভাস, ক্লে, বিভিন্ন ধাতব বস্তু, কাঠ ছুঁয়ে যায় তাঁর তুলির আঁচড়। আম্মার আঁকার ধরণ বৈগা আর্ট বা মুরাল পেইন্টিং, জনপ্রিয় চিত্রশিল্পী জনগড় সিং শ্যামের আঁকার সাথে সাদৃশ্য রয়েছে এই ধরণের। দেশে-বিদেশে আম্মার চিত্র প্রদর্শনীগুলি আদিবাসী জন-জীবনের সংস্কৃতিকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে এক অন্য মাত্রা দিয়েছে।
জোধাইয়া আম্মার গুরুজি আশিস স্বামী ‘জন-গণ-তসভিরখানা’ নামে একটি স্টুডিয়ো চালাতেন। দুর্ভাগ্যবশত কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ এসে কেড়ে নেয় তাঁর প্রাণ। ফলে বর্ষীয়ান ছাত্রীর সাফল্য দেখে যেতে পারেননি। এই আক্ষেপ রয়েছে আম্মার। আর তাই রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর হাত থেকে পদ্মশ্রী পেয়ে গুরুজিকে কৃতজ্ঞতা জানাতে ভোলেননি যোগ্য উত্তরসূরীর মতই।