আমুদরিয়া নিউজ : বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের শিশুরা এখন তাঁদের বাবা মায়ের হাত ধরে ঈদের জন্য নতুন জামাকাপড়, সাজ সরঞ্জাম কিনতে ব্যস্ত। তাঁদের এক মহা আনন্দ উৎসবের দিন আসতে চলেছে। এক বছরের অপেক্ষার পর দারুন আনন্দের একটা দিন। আপনজনদের সাথে দেখা হবে, আড্ডা হবে, খাওয়াদাওয়া হবে, কত্ত মজা। সেই আনন্দ উপভোগ করতেই একদিকে যখন দিন গুনছে বেশিরভাগ শিশু, তখনই ঈদকে এক দুঃস্বপ্ন বলে ভয় করছে গাজার শিশুরা।
গাজায় বসবাসকারী এক ২৬ বছরের প্যালেস্তানীয় মহিলা আফসোর জানান কিভাবে ঈদের এই পবিত্র সময়টিকেও তাঁদের দুঃস্বপ্ন বলে মনে হচ্ছে। ইসরায়েলের ১৫ মাস ধরে আক্রমণের সময় গাজার একটি স্কুলে আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়। তখন থেকে সেখানেই বসবাস করছে তাঁর পরিবার। মাঝে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে ৪২ দিনের যুদ্ধবিরতির সময় বহু পরিবার নিজেদের ঘরে ফিরে যায় ও কিছুটা শান্তি ফিরে আসে। তবে, ইসরায়েল প্যালেস্তানীয়দের জোরপূর্বক ঘর ছাড়ার দেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার সাথে সাথে আশ্রয়স্থলটি আবারও ভরতে থাকে। তাঁর স্বামী আহমেদ জানান, ইসরায়েলি বিমান হামলায় তাঁদের আসল বাড়িটি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। ২০২৩ এর পর থেকে এই নিয়ে আটবার প্রাণ বাঁচাতে তাঁরা নানান জায়গা বদল করেছেন, কথাটি বলার সময় তাঁর চোখে জল চলে আসে।
এরপরই আবেগের সুরে তাঁরা বলেন, তাঁদের দুই মেয়ে ও তিন ছেলে রয়েছে। যুদ্ধবিরতির সময় তাঁরা ভাবেন এবার হয়ত শান্তি ফিরে আসবে। তাঁরা ভেবেছিলেন তাঁরাও বাকি বাবা মায়েদের মতো তাঁদের ছেলে মেয়েদের একটি সুন্দর ঈদ উপহার দেবের। ঈদ উপলক্ষে তাঁদের জন্য জামাকাপড়, মিষ্টি ও আরও অনেক উপহার কিনবেন। তাঁরা সকলে মিলে অনেক আনন্দ করবেন। এই ভেবেই রোজ সপ্ন দেখছিলেন তাঁরা। কিন্তু তাঁরা এটা ভাবতেই পারেননি তাঁদের সুন্দর স্বপ্নটি আবার দুঃস্বপ্নে বদলে যাবে।
মঙ্গলবার রাতে হঠাৎ ইসরায়েলের বিমান হামলায় প্রায় ৭০০র বেশি মানুষ মারা যান। ক্ষতিগ্রস্ত হয় একাধিক ঘরবাড়ি। তার সাথে সাথেই গাজায় বসবাসকারী মানুষদের ঈদের স্বপ্ন এক নিমেষে শেষ হয়ে যায়। আহমেদ জানান যখন অন্য সব বাচ্চাদের মতো তাঁদের ছেলে মেয়েদেরও খেলাধুলা ও আনন্দ করার সময় তখন তাঁদের জল ও খাবারের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। রমজান বলে তাঁদের জীবনে এখন কিছুই নেই। ইসরায়েল তাঁদের জীবন থেকে সব আনন্দ কেড়ে নিয়েছে। বাচ্চাদের উপহার দেওয়ার পরিবর্তে এখন তাঁরা যেটা করতে পারেন তা হল বাচ্চাদের প্রাণরক্ষার জন্য লড়াই করে যাওয়া।
মাসখানেক আগে ইসরায়েলি বিমান হামলায় এক শিশুকে হারানোর শোকে শোকাহত মোহাম্মদ তার গর্ভবতী স্ত্রীর ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত। তার বাকি সন্তানরা তার সাথেই থাকে। তিনি ঈদের আগে বাচ্চাদের জন্য ছোট কিছু কেনার জন্য টাকা ধার করেছিলেন। কিন্তু এখন তাঁদের জন্য বেঁচে থাকাটাই সবচেয়ে বড়ো লড়াই।
ওনাদের মতই গাজায় বসবাসরত হাজার হাজার পরিবারের আজ বেঁচে থাকাটাই সবচেয়ে বড়ো লড়াই হয়ে দাঁড়িয়েছে। না আছে তাঁদের ঘরবাড়ি, না আছে ঈদের আনন্দ আর না আছে কোনও শান্তি। তাঁরা শুধুই অপেক্ষা করছেন একটি সুন্দর সকালের যেদিন তাঁদের আর ভয়ে ভয়ে কাটাতে হবে না। যেদিন তাঁরা মন খুলে আনন্দ করতে পারবেন। যেদিন তাঁদের জীবনে শুধুই শান্তি থাকবে। আজ এই মানুষগুলোর জন্যই প্রার্থনা করে চলেছেন অন্যান্য দেশের বহু মানুষ।