আজ কমলা কাহিনী
না, এটা কমলা নামক সেই বিখ্যাত হিন্দি সিনেমার গল্প নয়। কমলা নামের কোনও গুণী রমণীর গল্পও নয়।
এ হল শীতকালের সবচেয়ে মোহময়ী ফল কমলার কাহিনী। জানেন কি!
যিশুখ্রীষ্ট জন্মের প্রায় ৩১৪ বছর আগেও কমলালেবু জনপ্রিয় ছিল চিনে। সে দেশের তখনকার সাহিত্যে কমলালেবুর মিষ্টত্বের উল্লেখ রয়েছে।
কাজেই বুঝতে পারছেন, কত প্রাচীন একটা ফল নিয়ে আজ আমরা কিছু তথ্য শেয়ার করব আপনাদের সাথে।
মোটামুটিভাবে নানা তথ্য ঘাঁটলে দেখা যাচ্ছে, কমলালেবুর উৎপত্তি হিমালয়ের পাদদেশ এলাকাতেই। ভারত, মায়াম্মার, চিনের কিছু অংশে ৪ মিলিয়ন বছর আগেও কমলালেবু চাষ হতো।
কমলা শব্দটি বাংলা। কিন্তু, এর উৎস সেই সংস্কৃত-ই। কমলা শব্দটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ নারঞ্জ থেকে। যা পর্তুগিজ বণিকরা এশিয়া থেকে ইউরোপে নিয়ে যায়। ক্রমশ তা ইউরোপে চাষ শুরু হয়। স্পেনে গিয়ে নারঞ্জ হয়ে নারাঞ্জ। পর্তুগিজরা বলে লারাঞ্জা। ইংরেজিতে হয় অরেঞ্জ।
এই মুহূর্তে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কমলা উৎপাদনকারী দেশ হল ব্রাজিল। সারা বিশ্বের ৩৫ শতাংশ কমলালেবু ব্রাজিলে উৎপাদন হয়। তার পরে আমেরিকা, তৃতীয় স্থানে চিন, চতুর্থ স্থানে আমরা মানে ভারত। এ ছাডা় মেক্সিকো, স্পেন, মিশর, তুরস্ক, ইতালি ও আফ্রিকা, নেপালে, ভুটানেও কমলালেবু উৎপাদন হয়। এখন বাংলাদেশের সিলেটে কমলালেবু হচ্ছে।
ব্রাজিলে কমলালেবুর মরসুম বেশ দীর্ঘ।। সেখানে কমলার মরসুম জুলাই মাসেই শুরু হয়ে যায়। জানুয়ারি পর্যন্ত চলে।
কমলা রুটেসি গোত্রের কাঁটাযুক্ত গাছের ফল।
কমলাতে ভিটামিন সি, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, ভিটামিন ‘বি’, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাসসহ মিনারেল এবং প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে।
কমলালেবু এখন একটি দেশের জাতীয় ফলের শিরোপা পেয়েছে। দেশটি হল আমাদের প্রতিবেশী নেপাল। হ্যাঁ, নেপালের জাতীয় ফল কমলালেবু।
ভারতে দার্জিলিংয়ের কমলালেবু তার মিষ্টত্বের জন্য বিখ্যাত ও জনপ্রিয়। কিন্তু, বারতের কমলালেবুর শহর মানে অরেঞ্জ সিটি হল নাগপুর। এখানকার কমলালেবুর স্বাদ এবং গুণমান এর নিজস্বতা আছে বলেই ২০১৪ সালে নাগপুর কমলালেবু Geographical Indication (G.I.) মার্ক লাভ করেছে। পৃথিবীর বিখ্যাত কমলালেবুর মধ্যে নাগপুর কমলালেবু অন্যতম। এখানকার কমলালেবু শ্রীলঙ্কা, কানাডা, ইউ. কে, সৌদিআরব, ইউ. এস. এ, প্রভৃতি দেশে রপ্তানি করা হয়।
এবার আসি, কমলার গুণাগুনে।
যদি ডাক্তারের নিধেধ না থাকে, কমলালেবুতে অ্যালার্জি না থাকে তা হলে ভিটামিন ‘সি’ তে ঠাসা এই ফল রোজ খাওয়া উচিত।
কমলা খেলে হাই ব্লাড প্রেসার নিযন্ত্রণে থাকে।
কমলা খেলে ক্যানসারের ঝুঁকি কিছুটা হলেও কমে।
কমলালেবুতে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি থাকে। সেটা কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে রক্ষা করতে সহযোগিতা করে।
শরীরের বিষাক্ত পদার্থ মানে টক্সিন দূর হয়।
কমলালেবুতে উপস্থিত ভিটামিন সি, রক্তাল্পতা প্রতিরোধে সাহায্য করে। রোজ একটি কমলালেবু খেলে শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়বে।
কমলালেবু শিল্প ও সাহিত্যে বিভিন্নভাবে প্রতীকিত হয়েছে:
চিনে শিল্পকলায় বহু শতাব্দী আগে কমলালেবুর ছবি আঁকা হয়েছে। ইউরোপে জ্যান ভ্যান আইকের আর্নোফিনি ছবিতে প্রথম পশ্চিমী শিল্পে কমলালেবু দেখা যায়।
বাঙালি কবিদের অনেকেই কবিতায় শীতকালের কমলালেবুর কথা এসেছে।
জীবনানন্দ দাসের জীবনী ভিত্তিক যে ফিকশন লিখেছেন বাংলাদেশের শাহদুজ্জামান, সেই বইটির নাম একজন কমলালেবু।