আমুদরিয়া নিউজ ব্যুরো
আপনি অনেক সময় ফেসবুকে দেখেন, পার্ট টাইম চাকরির জন্য যোগাযোগ করুন। আপনি অনেক সময় খেয়াল করবেন, হোয়াটস অ্যাপে মেসেজ এসেছে, ঘরে বসে পার্ট টাইম রোজগার করতে চাইলে যোগাযোগ করুন, এই নম্বরে। আবার কেউ আপনাকে এসএমএস করেও জানায় যে পার্ট টাইম ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার ইনকামের জন্য যোগাযোগ করুন।
এ সব অফার যে সবগুলিই সঠিক তা কখনও ভাববেন না। এর মধ্যে ঠগবহাজদের সংখ্যাই বেশি বলে পুলিশ কিন্তু বারেবারেই বলে। এটাও বলে, কখনও ভাল করে খোঁজ না নিয়ে, সংস্থার অফিস সম্পর্কে বিশদে না জেনে, প্রয়োজনে পুলিশের সাহায্য নেওয়ার পরেই এ সবে সাড়া দেবেন।যাঁরা এ সব না করে সরাসরি যোগাযোগ করেছেন, তাঁদের কয়েকজনের কথা আজ বলব।
ঘটনা এক: রমেন মুখোপাধ্যায়। থাকেন কলকাতার এক অভিজাত পাড়ায়। অবসর নিয়েছেন সরকারি অফিস থেকে। পেনশন পান। বাড়ি ভাড়া থেকেও আয় হয়। তাঁর ছেলেমেয়ে দুজনেই বিদেশে থাকেন। একদিন রমেনবাবু হোটাস অ্যাপে মেসেজ পেলেন, বাড়িতে বসে না থেকে পার্ট টাইম আয় করুন। কোনও সিকিউরটি লাগবে না। কোনও টাকা দিতে হবে না।
রমেনবাবু ভাবলেন, বাড়িতে তো বসেই থাকি। তা হলে যোগাযোগ করেই দেখি। রমেনবাবু প্রথমে যোগাযোগ করতেই, ও প্রান্ত থেকে বলা হল, একটা অনলাইন মার্কেটিং প্ল্যাটফর্মে যোগ দিতে হবে। সেখানে যে সব পণ্য কেনাবেচা হবে তা থেকে কমিশন পাবেন। রমেনবাবু মেম্বারশিপের জন্য টাকা দিতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন। ও প্রান্ত থেকে বলা হয়, কোনও টাকা লাগবে না। রমেনবাবুকে ওই অনলাইন মার্কেটিং প্ল্যাটফর্মে এজেন্ট হিসেবে নাম নথিভুক্ত করে আইডি, পাসওয়ার্ড দেওয়া হয়।
তার পরে রমেনবাবু বলা হয়, অনলাইনের ওই প্ল্যাটফর্মে যে সব প্রোডাক্ট আছে তার মধ্যে অন্তত ১ হাজার টাকা দামের একটি কোথাও বিক্রি করতে হবে। তা হলে তাঁর এজেন্সি অ্যাকটিভ হবে। সেখানে কমিশন জমা পড়বে। তা দেখে একটি ঘর সাজানোর জিনিস রমেনবাবু নিজেই কিনে নেন। সহ্গেসঙ্গেই তাঁর এজেন্সি অ্যাকাউন্টে ২৫ শতাংশ টাকা জমা পড়ে যায়। তিনি মেসেজ পান, তাঁর জিনিস কুরিয়রে দেওয়া হয়েছে। সাতদিনের মধ্যে পৌঁছবে।
ভিডিও লিংক এখানে – https://youtu.be/GUMeFbSGMRM
পরদিন রমেনবাবুকে আবার অফার দেওয়া হয়, আরেকটি জিনিস বিক্রি করতে হবে যার দাম ৫ হাজার টাকা। রমেনবাবু জানান, তিনি অত টাকা দিতে পারবেন না। তখন তারা জানায়, নতুন এজেন্টকে কেনার জন্য ৩০ শতাংশ টাকা সংস্থা তাঁর অ্যাকাউন্টে দেয়। সেই মত রমেনবাবুর ওই অনলাইন প্ল্যাটফর্মের অ্যাকাউন্টে ১৫—টাকা জমা হয়। রমেনবাবু তখন বাকি সাড়ে তিন হাজার টাকা দিয়ে পণ্যটি কেনেন।
দেখেন কয়েক সেকেন্ডে তাঁর অ্যাকাউন্টে ৫ হাজার টাকার ২৫ শতাংশ টাকা জমা হয়েছে। এ সবই কিন্তু জমা হচ্ছে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের তাঁর এজেন্সি অ্যাকাউন্টে। এর পরে আরও দু দফায় ৩টি জিনিস তিনি কেন। সব মিলিয়ে কমিশন বাবদ অনেক টাকা জমা হয়ে য়ায়। তবে একটি জিনিসও তখনও তিনি হাতে পাননি।
একদিন তিনি জানান, তিনি এজেন্সি চালাতে চান না। সব টাকা তুলে নিতে চান। তখন সংস্থা জানায়, একটি লাস্ট ডিল করলে তবেই সব চটাকা পাবেন। তারা ৭০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকার পণ্যের তালিকা দিয়ে জানায়, যে কোনও একটি বিক্রি করলেই যাবতীয় কমিশন পাবেন। ততক্ষণে রমেনবাবু বুঝে গিয়েছেন, তিনি ফাঁদে পড়েছেন। তার পরে তিনি পুলিশকে জানান। পুলিশ তাঁকে লেনদেনের ব্যাপারে কথা চালিয়ে যেতে বলে। দুদিনের মধ্যে পুলিশ ৩ জনকে ধরে ফেলে। সব মিলিয়ে চারদিনের মধ্যে রমেনবাবুর প্রায় ৭০ হাজার টাকা অনলাইনের ওই অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে। যা এখনও ফেরত পাননি।
তাই হোয়াটস অ্যাপে কোনও অনুরোধ এলে চটজলদি ইনকামের আশায় পা দেবেন না। শতবার ভাবুন। পরামর্শ নিন সকলের। পুলিশকে জানান সন্দেহ হলেই।
ঘটনা দুই: জলপাইগুড়ির উপকণ্ঠের বাসিন্দা মহম্মদ শোযেব একদিন ফোন পেলেন, আপনি কি লকডাউনের সমযে গ্যাস কিনেছেন? তিনি জানান, হ্যাঁ। সে সময়ে গ্যাস সিলিন্ডার পিছু কেন্দ্রীয় সরকার ১ হাজার টাকা করে ছাড় দিয়েছিল তা পেয়েছেন? তিনি বলেন পাইনি।
ও প্রান্ত থেকে বলা হয়, আমরা গ্যাস এজেন্সি মনিটরিং কমিটি থেকে বলছি। আপনার টাকা আমরা পাঠিয়ে দেব। আপনার তো পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কে আকাউন্ট আচে। সেখানে দিয়ে দেওয়া হবে।
মহম্মদ শোয়েব বলেন, তাঁর ওই ব্যাঙ্কেই অ্যাকাউন্ট। ফোনে তাঁকে বলা হয়, অ্যাকাউন্ট ডিটেলস দিলে এখনউ টাকা দেওয়া হবে।
মহম্মদ শোয়েবের সন্দেহ হয়। তিনি বলেন, আমার গ্যাস এজেন্সির নাম কি জানেন! ও প্রান্ত থেকে সঠিক উত্তর আসে।
মহম্মদ শোয়েবকে ওরা জানতে চায়, আপনি লক ডাউনে ৬টি গ্যাস কিনেছিলেন না ৯টি!
মহম্মদ শোয়েব জানান, তাঁর মনে নেই।
তখন তাঁরা ৯টির টাকা দেওয়া হবে জানায়। তাঁরা জানায়, টাকা জমা করলে একটা ওটিপি যাবে সেটা দিলেই হবে।
মহম্মদ শোয়েবের সন্দেহ হয়। তিনি ফোনটা কেটে দিয়ে ট্রু কলারে ওই নম্বরটি কার জানার চেষ্টা করেন। দেখেন, তাতে লেখা উঠছে, ফ্রড।
অল্পের জন্য উনি বেচে যান।
সাইবার ক্রাইমের অফিসাররা অনেকেই জানিয়েছেন, অনলাইনে এভাবে জালিয়াতি করার চক্রগুলো মানুষের দুর্বলতার সুয়োগ নেয়। এসব প্রস্তাব পাত্তা নি দিলে সমস্যা হবে না।
সাইবার বিশেষজ্ঞরা জানান, অনলাইনে জালিয়াতি যারা করে তারা শিক্ষিত চাকরি প্রত্যাশী, আর্থিক অনটনে থাকা মানুষ, অবসরে থাকা চাকরিজীবীদের ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করে।
সাইবার ক্রাইম বিশেষজ্ঞরা জানান, সরাসরি কোনো কাজে বা ব্যবসায় টাকা বিনিয়োগ করার আগে আমরা যতটা যাচাই করি, অনলাইনে টাকা দেয়ার ক্ষেত্রে তার চেয়ে বেশি সময় ধরে, বেশি আলোচনা করে নেওয়া দরকার। যা করবেন,
১) প্রথমে অনলাইনে কোনও প্রস্তাব পেলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ওয়েবসাইটে খোঁজ নিন। সরকারি দফতরে সার্চ করে দেখুন সেটি রেজিস্টার্ড কি না!
২) পরিচিত কোনও সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়র, কম্পিউটার বিশেষজ্ঞকে জানান। পরামর্শ নিন।
৩) কারও পরামর্শ পাচ্ছেন না, তা হলে অনলাইনে কোনও ঝুঁকি নেওয়ার দরকার নেই।
৪) কেউ যদি অনলাইনে আপনাকে ভয় দেখায়, তা হলে সরাসরি থানায় চলে যান। যে নম্বর বা যে অ্যাকাউন্ট থেকে ভয় দেখানো হয়েছে সেটার স্ক্রিনশট নিয়ে পুলিশের কাছে জমা দিন।