আমুদরিয়া নিউজ : আদিবাসী মহিলা চিকিৎসকের বিরল সাফল্যকে ঘিরে হইচই এখন ভারতে। ছত্তিশগড়ের গোন্দ উপজাতি সম্প্রদায়ের ওই স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের নাম বিনীতা ধুরবে।
চলতি বছরের অগাস্টের প্রথম সপ্তাহের নিরিখে, এখনও পর্যন্ত ১০০টিরও বেশি যমজ সন্তানের সফল ডেলিভারি হয়েছে তাঁর তত্ত্বাবধানে। তাঁর হাত ধরেই গত জুলাই মাসে একইসাথে পুত্র ও কন্যাসন্তানের মা হন মেনকা বর্মা। ২০২২-২০২৪ সালের মধ্যে এই ২ বছরে ছত্তিশগড়ের দুর্গ জেলা হাসপাতালে এটি ডাক্তার বিনীতার ১১১ তম সফল ডেলিভারি।
প্রসব তো অনেক ডাক্তারই করান। কিন্তু, বিনীতার ব্যাপারটাই আলাদা। প্রসব করাতে গিয়ে যমজ ডেলিভারি করান একদিন। তার পরেই তাতে স্পেশালাইজেশন করার ইচ্ছে হয়। সেই শুরু।
এবার দেখে নেওয়া যাক ডাক্তার বিনীতার ছোটবেলা থেকে বড় হওয়ার দিনগুলো।
প্রথমে আসা যাক তাঁর শিক্ষা ও কর্মজীবন নিয়ে। মধ্যপ্রদেশের পান্ডারিয়া গ্রামের বিলাসপুর জেলায় জন্ম। ছোট থেকেই ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ছিল। ২০০২ সালে রায়পুরের পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু মেমোরিয়াল মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেন। এরপর ২০০৯ সালে ইন্টার্নশিপ শেষ করে দুর্গ জেলার আমাদোনা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শুরু হয় তাঁর কর্মজীবন। ২০১১ সালে দুর্গ জেলা হাসপাতালে শুরু করেন চিকিৎসা পরিষেবা। এখনও পর্যন্ত ১৭ হাজারের ওপর ডেলিভারি করেছেন, যার মধ্যে ৬৫০০ সিজারিয়ান ডেলিভারি।
যমজ বাচ্চাদের ৪-৫টি ডেলিভারি করানোর পরপরই বিনীতাতাতে আগ্রহী হন। সহকর্মীদের বলেন, এর পর থেকে যমজ সন্তানদের ডেলিভারি কেস উনিই সলভ করবেন। শুরু করলেন একের পর একে গণনা। ২০২২ সালে তিনি টার্গেট রাখেন ২২টি কেস সলভ করবেন।
একটি বাদে বাকি সবগুলিতে সফল হন। ২০২৩-এ এই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ৩০-এ। এরপর হাফ সেঞ্চুরি হতেই সেঞ্চুরি করার লক্ষ্যে অবিচল হন ডাক্তার বিনীতা। আগে অন্য কোন গাইনেকোলজিস্ট এই রেকর্ড করেছেন কি না, তার খোঁজও শুরু করেন। ধীরে ধীরে এই মাইলস্টোন ছোঁয়ার ইচ্ছা এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, হাসপাতালে কোন যমজ বাচ্চার ডেলিভারির বিষয়ে ফোন কল আসতে শুরু করেন। তাঁর কাছেই। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন সহকর্মীরাও।
গত বছরের শেষ ৮ মাসে এই সংখ্যা ৬০ পেরিয়ে যায়। এ বছরে তো পরিকল্পনা মাফিক শতরান হাঁকিয়েই ফেলেছেন ডাক্তার বিনীতা! তাঁর এই সফলতার কাহিনী দেশ ও বিশ্বের মানচিত্রে অনগ্রসর শ্রেণীর নারীদের পথ আরও প্রশস্ত করেছে।
প্রতিবেদক : অন্তরা মোদক