আমুদরিয়া নিউজ : পবিত্র ঈদ উৎসব সংস্কৃতি এবং সম্প্রীতির গভীর মেলবন্ধন ঘটায়। রাস্তাঘাট ঝলমল হয়ে ওঠে। আলোয় সাজানো বাজার থেকে শুরু করে কাবাব, বিরিয়ানির সুগন্ধ বাতাসে ভোরে ওঠে। পরিবারগুলি প্রার্থনা, ভোজ এবং উৎসবের জন্য একত্রিত হয়। হাতে আর মাত্র দুদিন, তারপরে আনন্দের ঈদের সেই পবিত্র দিন। শুধু মানুষই নন, ভারতের মসজিদ গুলিও সাজগোজের জন্য একেবারে তৈরি। ভারতের নানা প্রান্তের নানা শহরেই জাঁকজমক করে ঈদ পালিত হয়। তবে, তাঁদের মধ্যেও সেরা ৫টি জায়গার কথা আজ আমরা আপনাদের বলব:
১. লখনউয়ে নবাবি আমেজ
ভারতের নবাবদের শহর। এই শহরে ঈদের রাজকীয়তা বাকি শহরের চেয়ে একদম আলাদা। আইশবাগ ঈদগাহ, বড় ইমামবাড়া এসব জায়গাই আপনাকে লখনউ এর ঈদের রাজকীয়তা অনুভব করাবে। মুঘল সম্রাটদের নানান স্থাপত্য দর্শনের সাথে লখনউ এর অলিগলির আলোকসজ্জা, খাবারের দোকান থেকে কাবাব, বিরিয়ানির সুবাস পেলে নিজেকে কোনও নবাবের চেয়ে কম মনে হবে না।
২. দিল্লিতে ঝলমলে চাঁদনি চক
রাজধানীর ঈদ সবচেয়ে ভালোভাবে উপভোগ করা যায় পুরনো দিল্লিতে। জামা মসজিদ এই উৎসবের কেন্দ্রবিন্দু। হাজার হাজার মানুষ এখানে নামাজের জন্য জড়ো হন। নামাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথে রাস্তাগুলোতে খাদ্যপ্রেমীদের ভিড় জমে। করিমের বিখ্যাত করাহি গোস্ত থেকে শুরু করে কাল্লু নিহারির বাটার নিহারি, এখানেই দিল্লির ঈদের উল্লাস অন্য মাত্রায় পৌঁছে যায়। তবে, চাঁদনী চক মিস করবেন না কিন্তু, সেখানে উৎসবের আমেজ চাঁদের মতই ঝলমলে। মাটিয়া মহলে সেরা ফিরনি উপভোগ করতে অবশ্যই সেখানে যান। ঈদের দিন চাঁদনি চককে দিল্লির সবচেয়ে ঝলমলে শহর বললেই চলে।
৩. হায়দরাবাদি বিরিয়ানির টানই আলাদা
বিরিয়ানির কথা উঠলেই আমাদের যেই শহরের কথা সবার প্রথমে মাথায় আসে, এবার সেই হায়দ্রাবাদের কথা বলি। ভুরিভোজে মজতে হলে অবশ্যই সেখানে যান। নামাজের পর, সরাসরি মদিনা বিল্ডিং অথবা শাহ ঘাউসে যান আপনার জীবনের সবচেয়ে সুস্বাদু এক প্লেট বিরিয়ানির খেতে। এখানে ঈদের কেনাকাটা মানেই লাড বাজার। সেখানে রঙিন চুড়ি, সিল্কের ওড়না, হাতের কাজ করা জুতো দেখলে আপনি আর নিজেরে ধরে রাখতে পারবেন। ভারতের প্রাচীনতম এবং বড় মসজিদগুলির মধ্যে একটি, হায়দ্রাবাদের মক্কা মসজিদ, উৎসবের আধ্যাত্মিক মর্ম বোঝার জন্য উপযুক্ত জায়গা।
৪. কলকাতার আকর্ষম নাখোদা মসজিদের নামাজ
এমন কোনও উৎসব নেই যেখানে কলকাতা সেজে ওঠে না। ঈদের সময় কলকাতার পার্ক সার্কাস এবং নিউ মার্কেট প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। খাবার, ফ্যাশন এবং উৎসবের এক অদ্ভুত মিশ্রণ হয় সেখানে। আর কি রয়েছে? জমজম বা আরসালান ঘুরে কলকাতার সবচেয়ে স্বর্গীয় ধাঁচের বিরিয়ানি উপভোগ করুন। এর পর মিষ্টির জন্য, স্থানীয় মিষ্টির দোকান থেকে নেওয়া এক বাটি সুতারফেনি বা এক প্লেট সেওয়াইয়ের স্বাদের চেয়ে ভালো আর কিছু নেই। কলকাতার আতিথেয়তা ও ঐতিহ্য ঈদকে আরও সুন্দর করে তোলে। খাবার, কেনাকাটা কিংবা নাখোদা মসজিদের নামাজের সুন্দর পরিবেশ আপনাকে কলকাতার এক অনন্য ঈদের অভিজ্ঞতা দেবে।
৫. ভোপালের তাজ উল মসজিদে সে এক অসাধারণ ছবি
ভোপালের তাজ-উল-মসজিদ, এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম মসজিদ। সেখানে হাজার হাজার মানুষ ঈদের নামাজের জন্য সমবেত হয়। শহরের ঈদ উৎসব মোঘল ঐতিহ্যের সাথে গভীরভাবে জড়িত। সেখানে গেলে ঈদের সময় মাটন রেজালা , কিমা সামোসা এবং শিরমাল অবশ্যই একবার চেখে দেখা উচিত। যারা রাস্তার খাবার পছন্দ করেন তাদের জন্য চাতোরি গলি হল সেরা জায়গা। আপনি এই জায়গাকে স্বাদ, সুগন্ধ এবং উৎসবের উল্লাসের সমুদ্র।
ভারতে ঈদ হল উষ্ণতা, ঐতিহ্য এবং মুখরোচক খাবারে ভরা এক অভিজ্ঞতা। ঈদের দিন ভারতের ছোট বড় নানা শহর আপনাকে এই উৎসবের এক অন্যরকম আনন্দ দেবে। এই অভিজ্ঞতা এমন যে উৎসবের সেই দিন গুলির কথা মনে করলে আপনি আবার সেই শহর গুলির অলিগলিতে ফিরে গিয়ে হারিয়ে যেতে চাইবেন।