আমুদরিয়া ওয়েব ডেস্ক : আজ একজন শাহজাদির কথা শোনানো হবে। এই শাহজাদির চোখে অনেক স্বপ্ন ছিল। কিন্তু, কোনও স্বপ্নই সফল হয়নি। এভাবে তার ৩৩টা বসন্ত কেটে গিয়েছে। চোখে অনেক স্বপ্ন নিয়ে দুবাই গিয়েছিল সে। এখন একটি শিশুকে হত্যার দায়ে দুবাইয়ের আল বাটওয়া জেলে বন্দি। তাঁর মৃত্যুদণ্ড হয়েছে। দুবাইয়ের নানা সংবাদ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০ সেপ্টেম্বরের পরে যে কোনদিন তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতে পারে।
আসুন উত্তরপ্রদেশের বান্দা জেলার গোহিরা মুগলাই গ্রামের শাহজাদির ছোটবেলা থেকে বড় হওয়ার কাহিনী জানা যাক।
ছোট থেকেই তাঁর ভাগ্যটা এমন যে প্রতি পদেই বাধা। কিশোরীবেলায় পৌঁছনোর মুখে তার মুখে ফুটন্ত গরম জলে পড়ে। দীর্ঘ চিকিৎসার পরে সে বেচে যায়। কিন্তু, মুখের চামড়া সব কুঁচকে যায়।
করোনা কালে শাহজাদির সঙ্গে ফেসবুকে বন্ধুত্ব পাতায় উজাইর খান বলে এক ব্যক্তি। সে কিছুদিন পরে শাহজাদিকে প্রস্তাব দেয়, দুবাইয়ে নিয়ে মুখের চামড়া ঠিক করিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে পারে। সে জন্য টাকা লাগবে না, বরং চিকিৎসার পরে সেখানে হাসপাতালে কর্মীর কাজ মিলতে পারে। উজাইর জানিয়েছিল, তার চাচা এবং খালা আবুধাবিতে থাকেন এবং তারা একটি ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে সাহায্য করতে পারে। উজাইর নিজেকে সমাজকর্মী বলে পরিচয় দেয়। শাহজাদী প্রথমে রাজি হননি। কিন্তু, উজাইর তাকে আশ্বস্ত করে বলেছিল, ‘ভিসা মাত্র ৯০ দিনের জন্য। তার পরে শাহজাদী ফিরতে পারবে।
২০২১ সালের নভেম্বরে সৌদি আরবে পৌঁছানোর পরে শাহজাদী বুঝতে পারে, তার ভিসা ছয় মাসের জন্য। তাকে একটি বিবাহিত দম্পতির কাছে একটি দাসী হিসেবে বিক্রী করেছে উজাইর।
ওই দম্পতির চার মাস বয়সী শিশুর যত্ন নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সে থাকা খাওয়া পেলেও তার উপরে নানা অত্যাচর হতো বলে অভিযোগ। আচমকা একদিন শিশুটি মারা যায়। শিশুটির বাবা-মা শাহজাদীকে দায়ী করে খুনের মামলা রুজু করে দেয়।
ওই মামলায় উকিল দিতে পারেনি শাহজাদী। তার বাবা ভারত সরকারের নানা মহলে আবেদনে জানান, তিনি মেয়েকে ফোন করে দিনের পর দিন সাড়া পাননি। তার পরে পুলিশের দ্বারস্থ হন। পুলিশ সৌদি আরবে যোগাযোগ করে জানতে পারে, শাহজাদীকে খুনের মামলায় জেলে বন্দি রাখা হয়েছে। এর পরে শাহজাদীর সাজা ঘোষণা হয়ে যায়। শাহজাদীর বাবা জানান, শিশুটির পোস্ট মর্টেম পর্যন্ত হয়নি, অথচ খুনের দায়ে সাজা হয়ে একজনের প্রাণ যাবে তা হতে পারে না। এর পরে শাহজাদীর বাবা ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হস্তক্ষেপ চেয়চেন। তাঁর আর্জি, আমার মেয়ে নির্দোষ, দয়া করে তাকে বাঁচাতে সাহায্য করুন।”
শাহজাদীর বাবার দাবি, বিচারে সাক্ষ্য দেওয়া ডাক্তার অবশ্য বলেছেন, শিশুটির পরিবার তাকে পোস্টমর্টেম করতে দেয়নি, তাই তিনি চূড়ান্তভাবে শ্বাসরোধকে মৃত্যুর কারণ হিসাবে ঘোষণা করতে পারেননি। শিশুটিকে সেই সকালে একটি টিকা দেওয়া হয়েছিল এবং তার জ্বর ছিল, আদালতকে সেটাও বলা হয়েছিল।ময়নাতদন্ত না হলে আমার মেয়েকে কীভাবে দোষ দেওয়া যায়? বলছেন শাহজাদীর বাবা।গত জুলাই মাসে শাহজাদীর বাবা উজাইরের বিরুদ্ধে তার মেয়েকে প্রতারণা ও পাচারের অভিযোগে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন। উজাইর পালিয়ে যায়।
শাহজাদীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার কথা ছিল গতবছরের ২ মে তে। কিন্তু, সৌদি আরবে বন্যার কারণে এবং রাজপরিবারের সদস্য শেখ হাজ্জা বিন সুলতান বিন জায়েদ আল নাহিয়ান মারা যাওয়ার পরে এটি স্থগিত করা হয়। কিন্তু, শাহজাদীর বাবা জানতে পেরেছেন, ২০ সেপ্টেম্বরের পরে যে কোনও সময় তাকে ফাঁসি দেওয়া হতে পারে।