আমুদরিয়া নিউজ : রমেশ কুমার, তরী গ্রামের এক যুবক। ছোটবেলাতেই তার বাবা-মা মারা যাওয়ায় কার্যতই সে অনাথ ছিল। এলাকার এক মিষ্টির দোকানে থাকা,খাওয়ার পরিবর্তে যাবতীয় কাজ করে দিত সে। তবে দুবেলাই যে ভরপেট খাবার জুটত তা নয়। এই দোকান সেই দোকানে কাজ করে টাকা জমিয়ে সে পড়াশোনা করত। ক্লাস সিক্স থেকেই তার পুলিশের চাকরির প্রতি আগ্রহ জন্মায়। কিন্তু টাকার অভাবে চাকরি তো দুর ক্লাস নাইনেই ইতি হয় তার স্বপ্নের। কিন্তু, ওই যে কথায় আছে শেষ থেকেই শুরু, রমেশের জীবনেও এমন এক শুরুর আলো নিয়ে আসে এক পুলিশ দাদা। হ্যাঁ, রমেশ তাকে পুলিশ দাদাই ডাকত। সেই পুলিশ তার পড়াশোনার দায়িত্ব নেয় এবং প্রায় ৯ বছর পর রমেশ প্রথম চেষ্টাতেই পুলিশের চাকরি পায়। তার স্বপ্ন পূরণ হয়। সে এখনো তার স্বপ্নপূরণের পুরো কৃতিত্বটা তার পুলিশ দাদাকে দেয়।
সেই পুলিশদাদাও বাস্তবেই রয়েছেন। তিনি এখন ৪০০র ও বেশি পড়ুয়াদের সরকারি চাকরির লক্ষ্যে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
দিল্লি পুলিশের কনস্টেবল অমিত লাঠিয়া ৩৫০ জনেরও বেশি অভাবী শিশুকে দত্তক নিয়ে তাদের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। এই শিশুরাই কোনও এক সময় রিকশা চালাত, অথবা রংমিস্ত্রি বা ওয়েটারের কাজ করত। আর এরাই এখন দেশে বিভিন্ন সরকারি ক্ষেত্রে কাজ করছেন, যার সবটাই অমিতের জন্য।
অমিত জানিয়েছেন,নিজের আয়ের প্রায় পুরোটাই তিনি এই বাচ্চাদের ভরণ পোষণ ও পড়াশোনার জন্য খরচ করেন যাতে তাদের স্বপ্ন পূরণে কোনও বাধা না আসে। ব্যক্তিগত খরচের জন্য অল্পকিছু পরিমাণ অর্থ সরিয়ে রাখেন তিনি।
আজ থেকে প্রায় ১৩ বছর আগে, চারটি ছোট ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে সেখানে পড়ুয়াদের জন্য বিছানা, টেবিল, চেয়ার ও লাইব্রেরির তৈরি করেন।
২০১২ সালে তিনি ১০ জন পড়ুয়াকে নিয়ে তার প্রথম ব্যাচ শুরু করেন। আজ তার এই প্রচেষ্টায় ৩৫০ জন পড়ুয়ার মধ্যে ১৮৫ পড়ুয়া দেশের নানা সরকারি ক্ষেত্রে চাকরিরত। সংবাদ সংস্থাকে অমিত জানান, তার ছাত্রছাত্রীদের চাকরি পাওয়াটা শুধু তাদের ভাগ্য বদল বা স্বপ্ন পূরণই করেনি, বরং শিক্ষক হিসেবে তার আত্মবিশ্বাসকেও বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। আজ তার এই উদ্যোগে তার পুরানো চাকরিরত ছাত্রছাত্রীরাও পাশে দাঁড়িয়েছেন।
অমিত লাঠিয়া নিজেও এক গরিব পরিবারের ছেলে ছিলেন। এক সময় অভাবের কারণে নানা জায়গায় কাজ করে তিনি সরকারি চাকরির কোচিংয়ের ফি দিয়েছিলেন। ২০১০ সালে তিনি দিল্লি পুলিশে চাকরি পান। তখন থেকেই তিনি ঠিক করেন নিজের সবটুকু দিয়ে হলেও অভাবী শিশুদের সাহায্য করে তাদের স্বাবলম্বী করে তুলবেন, যাতে তারা টাকার লোভে পরে কোন বাজে কাজ না করে।
তার এক ছাত্র জানান, তিনি অমিত স্যারের কাছেই পড়াশোনা করে চাকরি পেয়েছেন। যখন স্যার ডিউটিতে থাকেন তখন তিনি বাচ্চাদের পড়ান। স্যারের প্রচেষ্টাতেই আজ তিনি এই জায়গায় পৌঁছাতে পেরেছেন।
অমিত এটাও জানান যে, বিয়ের পর যখন তিনি তার স্ত্রীকে এই উদ্যোগের কথা বলেন, তখন তার স্ত্রীও তাকে ভীষণভাবে উৎসাহ দেয়। আজ তিনি তার স্ত্রী এর প্রতিও কৃতজ্ঞ।
বড় স্বপ্ন দেখা সকলের অধিকার। শিক্ষার মাধ্যমে যাতে তারা সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারে সেটা নিশ্চিত করা সকল মানুষের দায়িত্ব। আজ বহু পড়ুয়া অমিতের সহায়তায় তার স্বপ্ন পূরণ করছে, কিন্তু বহু পড়ুয়া এখনও স্বপ্ন দেখলেও তা পূরণের জন্য কাওকে পাশে পায়নি। তাই দেশের সকল মানুষ যাতে তাদের স্বপ্ন পূরণে পাশে দাঁড়ায়, এই অনুরোধ করেছেন অমিত লাঠিয়া।
প্রতিবেদক : শিউলি ভট্টাচার্য্য