আমুদরিয়া নিউজ : মহানবমীর দিন আপনাকে স্তম্ভিত করে দেওয়ার মতো একটা খবর শোনাই। আমাদের জোগাড় করা খবর নয়। তৈরি করাও নয়। এটি রাষ্ট্রসঙ্ঘের ইউনিসেফের একটি সমীক্ষার ফলাফল। সেই সমীক্ষার ফল বলছে, এই বিশ্বে ১৮ বছর বয়সের আগেই ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৩৭ কোটি মেয়ে ও শিশু। মেয়েদের মধ্যে সব বয়সীই রয়েছেন। পুরুষ শিশু-কিশোরদের উপরেও যৌন নির্যাতন কম হচ্ছে না। গড়ে প্রতি ৮ জনে একজন যৌন অত্যাতাতের শিকার।
বুধবারল ইউনিসেফের পক্ষ থেকে প্রকাশিত একটি গবেষণা ও সমীক্ষার তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। তাতেই ধরা পড়েছে শিউরে ওঠার মতো তথ্য। এবারই প্রথম উঠে এল পুরুষ ও ছেলেশিশুদের উপরেও যৌন নির্যাতনের ভয়ঙ্কর তথ্য। ইউনিসেফ ওই সমীক্ষার ফল প্রকাশ করে বলেছে, সরাসরি শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৬৫ কোটি। তার বাইরে সারা দুনিয়ার প্রতি ৫ জনে একজন নারী ও মেয়ে শিশু অনলাইন বা মৌখিক যৌন অত্যাচারের শিকার হয়েছেন।
ইউনিসেফ বলছে, যৌন নির্যাতনে নারী ও মেয়ে শিশুদের কথা বারেবারেই আসে। কিন্তু, ছেলেশিশুদের উপরে বা পুরুষদের উপরে নির্যাতনের কথা প্রকাশ্যে তেমন আসে না। এবার সমীক্ষায় সেই ছেলেশিশুদের নির্যাতিত হওয়ার দিক সামনে এসেছে।
ইউনিসেফ সমীক্ষার পরে মনে করছে, যৌন নির্যাতনে নারী ও মেয়ে শিশুরা মারাত্মক বিপন্ন। সেটা ঠিক। কিন্তু, শৈশবে ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে যারা, তাদের প্রতি ১১ জনের মধ্যে ৯ জন মেয়েশিশু, বাকিরা দুজন ছেলে শিশু। গোটা বিশ্বে ২৪ থেকে ৩১ কোটি পুরুষ ও ছেলেশিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
নভেম্বর মাসে শিশুদের উপরে যৌন অত্যাচার বন্ধ করার ব্যাপারে কলম্বিয়াতে গ্লোবাল মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্স অন এন্ডিং ভায়োলেন্স চিলড্রেন’ এর উদ্বোধন হবে। তার আগে ইউনিসেফ এই প্রতিবেদন প্রকাশ করার পরে গোটা দুনিয়ায় হইচই পড়েছে।
ভিডিও লিংক : https://youtu.be/rxTIDnMM_wA
ইউনিসেফ বলেছে, যা তথ্য পাওয়া গিয়েছে তার বাইরের অনেক রয়েছে। কারণ, লোকলজ্জা, সামাজিক মযার্দার ভয়ে অনেকে মুখ খোলেননি। ওই সমীক্ষা অনুযায়ী, আফ্রিকায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মেয়ে ও নারী যৌন নির্যাতনের শিকার। প্রায় ৭ কোটি ৯০ লাখ বা সমীক্ষায় প্রাপ্ত মোট সংখ্যার ২২ শতাংশ। পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এই সংখ্যা ৭ কোটি ৫০ লাখ বা মোট অত্যাচারিতের ৮ শতাংশ।
ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় যৌন নির্যাতনের শিকার কম নেই। সেখানে ৬ কোটি ৮০ লাখ বা ১৪ শতাংশ, লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান দেশগুলিতে ৪ কোটি ৫০ লাখ বা ১৮ শতাংশ। উত্তর আফ্রিকা ও পশ্চিম এশিয়ায় ২ কোটি ৯০ লাখ বা ১৫ শতাংশ।
শতাংশের হিসেবে ওশেনিয়ায় যৌন নির্যাতনের শিকার মেয়ে ও নারীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। প্রায় ৩৪ শতাংশ। শিশুদের উপরে যৌন অত্যাচার বন্ধ করতেই হবে বলে মনে করে ইউনিসেফ। কারণ, শিশুদের যে ট্রমা হয় তা সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হয় তাদের।
ইউনিসেফ সমীক্ষায় দেখেছ, বয়ঃসন্ধিকালে অধিকাংশ যৌন অত্যাচারের ঘটনা ঘটে থাকে। ১৪ বছর থেকে ১৭ বছর বয়সীদের সঙ্গে। যারা এই নির্যাতনের শিকার হয় তারা যৌন সংক্রামিত রোগ, ওষুধের অপব্যবহার ও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার মুখে পড়ে। অনেকে এই গোটা অত্যাচারের বিষয়টি নানা চাপে গোপন রাখতে গিয়ে আরও বিপাকে পড়ে।
ইউনিসেফ ২০১০ সালে সমীক্ষা শুরু করে। ২০২২ সাল অবধি ১২০টি দেশে নারী ও শিশুদের ওপর সমীক্ষায় পাওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে রিপোর্টটি পেশ করেছে। এই ভয়ঙ্কর রিপোর্ট গোটা বিশ্বকে উদ্বিগ্ন করেছে। সকলে মিলে একে রুখতে হবে।