সুদেষ্ণা সাহা : শীতের সময় শিলিগুড়িতে হিমেল বাতাস বইবেই। কিন্তু, শীতের সময়ে সেই হিমল বাতাসকে ছাপিয়ে গেল বইবাতাস। ৬ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর অবধি শিলিগুড়ির বাতাসে যেন শুধু বইয়েরই ঘ্রাণ।
তাতেই ভেসে গেল উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোর বইপ্রেমীদের মন-প্রাণ।
৬ ডিসেম্বর বিকেলে কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামের সামনে থেকে বই পড়ার বার্তা জোরদার করতে মিছিলে পা মিলিয়েছিলেন বিস্তীর্ণ এলাকার বইপ্রেমীরা। সেই বুক লাভারদের সৌজন্যেই ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত জমজমাট ছিল ৪২ তম উত্তরবঙ্গ বইমেলা।
কোনও বইপ্রেমী বলছেন, অসাধারণ অভিজ্ঞতা হল। কেউ বলছেন, সে এক দারুণ ব্যাপার বটে!
অবশ্য বই বিক্রেতা এবং প্রকাশকদের সকলেই যে তৃপ্ত তা অবশ্য নয়। কারও মতে, একই সময়ে যাতে অন্য কোনও মেলা না হয় সেটা খেয়াল রাখতে হবেষ এবার তো যে দিন উত্তরবঙ্গ বইমেলা শুরু হয়, সে দিনই শেষ হয় সরকারি মহকুমা বইমেলা। ফলে, সেখানে যাঁরা কেনাকাটা করেছেন, তাঁরা কি ফের সাতদিনের মধ্যে আরওএ বই কিনতে পারেন বলে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।
আরও একটা ব্যাপার হল লিটল ম্যাগাজিন। আমুদরিয়া নিউজ মনে করে, লিটল ম্যাগাজিনের জন্য গোটা মেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে জায়গা বরাদ্দ করাই ভাল। সব কিছুতেই কলকাতাকে ফলো করে এক জায়গায় লিটল ম্যাগাজিনকে রাখতে হবে কেন! মেলার চার দিকে চারটি জায়গায় লিট ম্যাগাজিনদের জন্য বরাদ্দ করলে আরও ভাল হবে। প্রয়োজনে মেলার মাঝখানেও একটি ছোট্ট জায়গায় কয়েকটি লিটল ম্যাগাজিনকে রাখা যেতে পারে। সবটাই হোক না লটারি করে।
সব মিলিয়ে উত্তরবঙ্গ বইমেলা ঘিরে প্রত্যাশার পারদ আকাশ ছুঁয়েছে। মেলায় আগত দর্শনার্তী, বইপ্রেমীদের জন্যই এটা সম্ভব হয়েছে।
বইমেলা কমিটি সমস্ত সদস্য বিশেষত আহ্য়াক মধুসূদন সেনের অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্যি এটা সম্ভব হয়েছে। উপদেষ্টা শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব তো কতবার স্টলে স্টলে ঘুরেছেন। চণ্ডালের স্টলে একাধিকবার গিয়েছেন। বইমেলা মাতাতে নিজে গানও গেয়েছেন।
আর যা বললেই নয় তা হল চণ্ডাল বুকসের কথা।
এই চণ্ডাল বুকস এবার উত্তরবঙ্গ বইমেলায় ৩
৫টি বই প্রকাশ করেছে।
তার মধ্যে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহের বই তো প্রকাশের দিনেই প্রথম সংস্করণ শেষ।
প্রথম সংস্করণ শেষ হয়েছে কল্যাণময় দাসের হাঁসের মাংস উপন্যাসটির।
প্রথম সংস্করণ ফুরিয়েছে অরিন্দম পালের দেবী থ্রিলারের। প্রথম সংস্করণ শেষ মৈনাক ভট্টাচার্যের ভাস্কর্যের আঁতুড়ঘরের. প্রথম সংস্করণ শেষ সুকান্ত নাহার সাঝদিয়ার চুপকথারও।
দারুণ ব্যাপার হল, কথা সাহিত্যিক বিপুল দাসের লাল বল উপন্যাসটি আজও বেস্ট সেলার। সেই ২৩ বছর আগের লেখা এখনও বইপ্রেমীরা গোগ্রাসে পড়ছেন। তাঁর রাগ রঞ্জাবতীও হিট।
আর বিক্রি হয়েছে প্রেম। সেবন্তী ঘোষের প্রেমের কবিতা চণ্ডাল থেকে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে। তার পরে রয়েছে প্রেম সিরিজের শ্যামলী সেনগুপ্ত, মহুয়া, মনোজ পাইন, শুভময় সরকার, গৌতম গুহ রায়।
সব মিলিয়ে বইমেলার কটা দিন শিলিগুড়ি যেন বইপ্রেমের শহর হয়ে উঠেছিল।
প্রেমের জয় হোক, বইপ্রেমের জয় হোক।
সুদেষ্ণা সাহা