নিউজ ব্যুরো : একজন বলেছিলেন আরজি করের ঘটনা নাকি বিচ্ছিন্ন ঘটনা! তার পরে এমন ট্রোলড হয়েছিলেন যে সে কথা গিলতে হয়েছিল তাঁকে। তিনি হলেন সৌরভ গাঙ্গুলী।
এবার তাঁর স্ত্রী ডোনা গাঙ্গুলী বলে দিলেন, এরকম রেপ-টেপ তো সব জায়গাতেই হয়। বাংলার মতো প্রতিবাদ কোথায় হচ্ছে! এখানে সবাই মিলে প্রতিবাদ করছে ভাল ব্যাপার!
আচ্ছা, এই যে ডোনা গাঙ্গুলি বলে দিলেন, রেপ টেপ, এর মানে কি! এটা কি বিস্কুট-টিস্কুট, ঘোড়া-টোড়া, ডাল-ভাতের মতো ব্যাপার। ডোনা গাঙ্গুলি কিন্তু ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেট অধিনায়কের স্ত্রী। ফলে, তাঁর কথাবার্তার একটা সামাজিক গুরুত্বও আছে।
এরকম রেপ টেপ হয় বলে দিলে তা নিয়ে হইচই হওয়ারই কথা। আজকের সব সংবাদপত্রেই মোটামুটি বিষয়টি নিয়ে লেখা হয়েছে। কেউ লিখেছে, এবার বেঁফাস কথা বলে বিপাকে ডোনা।
আবার কেউ লিখেছে, এটা কি বললেন ডোনা!
আর জি করের ঘটনা বিচ্ছিন্ন কি না সেটা তদন্তেই স্পষ্ট হবে। আর এরকম রেপ টেপ তো সব জায়গায় হয়, এ ধরনের কথা বলার জন্য আগামী দিনে হয়তো ডোনা গাঙ্গুলিকেও দুঃখপ্রকাশ করতে হতে পারে। নাও হতে পারে।
আমুদরিয়া নিউজের পক্ষ থেকে আমরা কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষিকা, অধ্যাপক, আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। তাঁরা প্রায় সকলেই একমত হয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, সমাজের মান্যগণ্যরা যদি এরকম ভাষা মানে রেপ টেপ তো সব জায়গায় হয়, এমন মন্তব্য করেন তাতে আখেরে সমাজেরই বিপুল ক্ষতি। কারণ, এতে রেপ টেপ হবে সেই বার্তাই প্রকারান্তরে যায়। একজন মহিলা হয়ে যদি রেপ টেপ হয় জাতীয় মন্তব্য করেন তা হলে তার চেয়ে দুঃখের কিছু নেই বলে তাঁদের মত।
এবার ইউনাইটেড নেশনসের মানে রাষ্ট্রসঙ্ঘের মহিলা বিভাগের একটি অনলাইন ম্যাগাজিনে রেপের বিরুদ্ধে কীভাবে জনমত তৈরি করতে হবে, কীভাবে রেপ নির্মূল করার দিকে এগোনো যাবে সেটা লেখা হয়েছে।
যে লেখার প্রথমেই বলা হয়েছে,একটা ধারণা তৈরি হয়ে আছে তা হল, মেয়েদের না মানেই হ্যাঁ। এটা কখনও হতে পারে না। কোনও শারীারিক সম্পর্কের আগে মেয়েটিকে স্বেচ্ছায় হ্যাঁ বলতে হবে, না হলেই সেটা ধর্ষণ হয়ে যাবে। এই ধারণাটা ছোট থেকেই ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে জোরাল করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, সমাজে প্রচলিত ধারণা রয়েছে, ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের গুরুত্ব কম, দাম বেশি ছেলেদের। ছেলেরা অপেক্ষাকৃত উচ্চ স্তরে থাকায় মেয়েদের উপরে জবরদস্তি করার অধিকার পায় বলে মনে করা হয়। এই ধরণা ভুল। ছেলে ও মেয়ের গুরুত্ব সমান, কেউ কারও কম নয়, এটা বারবার বলতে হবে ছোট থেকেই।
তৃতীয়ত পৌরষ সম্পর্কে যে প্রচলিত ধারণা সেটাও পাল্টাতে হবে। পুরুষ মানেই নারীদের উপরে গায়ের জোর খাটাতে পারবে এই পুরানো ধারণা থেকে বেরোতেই হবে। সে জন্য পুরুষত্ব মানে যে জবরদস্তি করার অধিকার নয়, সেটাও ছোটবেলা থেকে ছেলে ও মেয়েদের বোঝাতে হবে।
চার নম্বর পয়েন্ট হল, কোথাও কেউ রেপড হলে তাঁকে দোষ দেওয়া পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে আইন করতে হবে যে কোথাও কোনও ধর্ষিতাকে তার পোশাক, কিংবা কোনও কিছু নিয়ে দোষ দেওয়া যাবে না। সাধারণত দেখা যায়, ধর্ষিতা অত রাতে কী করছিল, বা সে কেন মদ খেয়েছিল, সে কেন বারে গিয়েছিল, সে কেন খোলামেলা পোষাক পরেছিল, এ সব অনেকে বলে বিষয়টি লঘু করতে চান। এভাবে রেপ কালচারকে মদত দেওয়া হয়। এটা আইন করে বন্ধ করতে হবে। রেপ হল রেপ, সেখানে মেয়েটি কি পোশাক পরেছিল, কী খেয়েছিল, কোথায় ছিল তা নিয়ে্ প্রশ্ন তুলে রেপটাকে স্বীকৃতি দেওয়া যায় না। এটাও সকলকে মনে রাখতে হবে।
পাঁচ নম্বর পয়েন্ট হল, জিরো টলারেন্স। কোথাও কাউকে যৌন হেনস্থা করা হলে কিংবা খারাপভাবে তাকালে অথবা ধর্ষণ করলে কোনমতেই বরদাস্ত করা যাবে না, বরদাস্ত করা হবে না এমন মনোভাব দেখাতে হবে সমাজের সকলকে।
৬ নম্বর পয়েন্ট হল, সমাজে রেপ ছিল, আছে থাকবে এমন মনোভাবই হল রেপ কালচার টিকিয়ে রাখার হাতিয়ার। এ ধরনের মনোভাব সকলেরই ক্ষতি করে। বরং সকলে মিলে রেপ কালচারকে সমাজ থেকে শেকড় সহ কীভাবে উপড়ে ফেলা যায় সেটাই করতে হবে।