আমুদরিয়া নিউজ :
মিসেস রায় একজন গৃহবধূ। চাকরি করেন না। সারাদিন ঘরসংসার নিয়েই থাকেন। সম্প্রতি তাঁর রিল দেখার নেশা হয়েছে।
তিনি একদিন রিল দেখতে দেখতে এমনই অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিলেন, গ্যাসে যে রান্না বসানো ছিল এটা ভুলেই গেছিলেন। প্রায় আধ ঘণ্টা পরে পোড়া গন্ধ নাকে আসায় তিনি দৌড়ে যান রান্নাঘরে। ততক্ষণে গ্যাস ওভেনে বসানো কড়াইয়ের তরকারি কালো হয়ে গিয়েছে। মিসেস রায় এক ইন্টারভিউয়ে বলছিলেন, তার পর থেকে তিনি রান্নাঘরের কাজ শেষ না করে কখনও রিল দেখেন না।
দ্বিতীয় ঘটনা বলি। ছেলেটা রিল দেখতে খুবই ভালবাসে। রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতেও সে রিল দেখে। একদিন সে ড্রেনেই পড়ে যায়। তাঁর বাঁ হাত ভেঙেছে। এক সমীক্ষায় সে বলেছে, রিল দেখার নেশায় সে কালভার্ট যেখানেো ফাঁকা সেটা খেয়াল করেনি বলে এমন হয়েছে। সে যখন এ কথা বলছিল তখনও তাঁর হাতে মোবাইল।
আরও একটি ঘটনা। শিশুটির বয়স ৫-৬ বছর হতে পারে। তার বাবা ও মা দুজনেই চাকরি করেন। দুজনে বাড়িতে থাকার সময়ে রিল দেখে থাকেন যে যার ঘরে। শিশুটি খেলার কথা বললে তাকেও মজার মজার রিল দেখান। আবার কখনও রিল দেখার জন্য মোবাইল হাতে ধরিয়ে দেন। শিশুটি ক্রমশ রিলের নেশায় আসক্ত হল। সে বাবা-মায়ের অনুপস্থিতিতে গৃহ পরিচারিকার মোবাইলে রিল দেখা শুরু করে। শেষ অবধি শিশুটিকে নিয়ে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হয়েছে।
আসলে রিল ভিডিওর দুনিয়ায় ডুবলে এমন খারাপ অভিজ্ঞতা হতে পারে।
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় আরও কিছু ভয়ংকর খবর সামনে এসেছে, রিল ভিডিও বানাতে গিয়ে ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যু, আপনজনের মৃতদেহের সামনে দাড়িয়ে রিল ভিডিও তৈরির কথাও শোনা যায়।
ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটকের মত অ্যাপ গুলিতে রিল ভিডিও দেখতে প্রায় ছোট থেকে বড় সকলেই ভালবাসে। কিন্তু, এই রিল ভিডিও দেখার নেশা রোজ একটু একটু করে শেষ করে ফেলছে মস্তিষ্কের সকল শক্তি কে। তাই আগেই সাবধান হন আর এই রিল গুলির ক্ষতিকর প্রভাব আর এগুলোকে এড়িয়ে চলার পথ গুলো জেনে নিন।
: রিল ভিডিওর ক্ষতিকর প্রভাব :
১. শর্ট ভিডিও বা রিল গুলি আমাদের সময় নষ্টের সাথে সাথে শরীর তথা মস্তিষ্কেও বিরাট প্রভাব ফেলে।
২. চিনের একটি গবেষণায় দেখা গেছে রিল ভিডিও দেখার সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের রক্তচাপও বাড়তে পারে।
৩. রিল এ সমস্ত মনোযোগ থাকলে কাজ কিংবা পড়াশোনা থেকে মন উঠে যায়।
৪. কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা যায় যারা অত্যধিক রিল ভিডিও দেখেন, তারা মানসিক অবসাদে বেশি ভোগেন।
৫. মাঝবয়সি ছেলেমেয়েদের পরিবারের সাথে মানসিক দূরত্ব তৈরি হয়। তারা খিটখিটে হয়ে যায়।
৬. রিল দেখা বা বানানোর সময় অন্যমনস্ক হলে বড়সড় বিপদ ঘটে যায়।
৭. অতিরিক্ত রিল দেখলে ভুলে যাওয়ার প্রবণতাও দেখা যায়।
: রিল দেখা থেকে বিরত থাকার উপায় :
১) রিল দেখার সময়সীমা ঠিক করুন। প্রতিটি দিন আলাদা করে সময় সেট করতে পারেন। অত্যধিক ১০ মিনিট পর্যন্তই সময় ঠিক করুন।
২) নতুন বিষয়বস্তু পরীক্ষা করার প্রলোভন এড়াতে সোশ্যাল মিডিয়া বিজ্ঞপ্তিগুলি বন্ধ করুন৷
৩) এমন শখে নিজেকে ডুবিয়ে রাখুন যা অনলাইন জিনিসের চেয়ে আপনাকে ভাল রাখে। আঁকা, গান, গাছের পরিচর্যা , রান্না করায় মন দিতে পারেন।
৪) রিল দেখার সময় ধীরে ধীরে কমিয়ে দিয়ে নিজেকে বাহবা দিন।
৫) সমাজসেবা মূলক কাজে নিযুক্ত হন।
মনে রাখবেন, এই অভ্যাস রপ্ত করতে সময় লাগবে। প্রথম প্রথম অসুবিধাও হবে। পরে বুঝবেন এই অভ্যাস গুলিই আপনাকে বড় বিপদের হাত থেকে বাঁচিয়েছে।
রিল দেখা কোন অপরাধ নয়। তাতে অনেক নীতি ও শিক্ষামূলক বা নতুন কিছু জানার সুযোগ আছে। কিন্তু তা নেশা হয়ে গেলে সমস্যা হতে পারে।
প্রতিবেদক : শিউলি ভট্টাচার্য