আমুদরিয়া নিউজ : পৃথিবীর প্রাচীনতম ভাষাগুলির মধ্যে অন্যতম সংস্কৃত। মুনি-ঋষিদের মন্ত্র, গুরু-শিষ্যের শ্রুতি আরও নানা বাণী-উপদেশের সংমিশ্রণের এই সংস্কৃতকে ধরা হত পবিত্র হিসেবেও। বর্তমানে প্রাচীন এই ভাষা ‘Dead language’ বলে থাকেন অনেকে। নেপথ্যের কারণে রয়েছে বহু তর্ক-বিতর্ক। তা নিয়ে কথা না বাড়িয়ে আজ এমন এক ‘সংস্কৃত’ প্রেমীর গল্প তুলে ধরা যাক, যার উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত পড়াশোনা বিজ্ঞান শাখায়। হঠাৎ করে কেন, কীভাবে সংস্কৃতকে আঁকড়ে ধরলেন ঝাড়খণ্ডের প্রত্যন্ত গ্রামের একজন passionate learner, রইল তারই কাহিনী।
ডাঙ্গি সোরেন, একজন গর্বিত সাঁওতালি। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা শহরের সীমানা পেরিয়ে। সেখানে ভাষা শিক্ষা বলতে আঞ্চলিক বাংলা আর সাঁওতালি। এরপর জামশেদপুরের স্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হলে ইংরেজির সাথে প্রথম পরিচয়। স্কুল শেষ করেই বিয়ে হয়ে যায় ডাঙ্গির। স্বামীর কাজের সূত্রে নিউ দিল্লিতে দুই সন্তান নিয়ে সুখী গৃহকোণ বেশ কয়েক বছর।
২০০৮ সালে সপরিবারে ঝাড়খণ্ডে ফিরে আসেন ডাঙ্গি। নামী স্কুলে বাচ্চাদের ভর্তি করানোর ইচ্ছে আর পাঁচ জন বাবা-মায়ের মতই। কিন্তু তাঁদের এই আশায় বাধ সাধল নামকরা শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের প্রত্যাশা। শিশুর বাবা-মাকেও হতে হবে শিক্ষিত! অন্তত গ্র্যাজুয়েট। ডাঙ্গির স্বামী সুনীল মুর্মু চন্ডিল কোলহান বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত সিংভূম কলেজের সহকারী অধ্যাপক হলেও ডাঙ্গি নিজে স্কুল পাশ। এখান থেকেই জীবনের দ্বিতীয় ইনিংসের ভাবনা তাঁর। যে করেই হোক আরও পড়তে হবে। বাচ্চাদের জন্য, নিজের জন্য।
সংস্কৃতের বহু শ্লোক আগাগোড়াই কণ্ঠঃস্থ ছিল সুনীলের। স্বামীর সাহচর্যে সংস্কৃতে প্রাথমিক তালিম শুরু করে ডাঙ্গি। পড়াশোনা থেকে সরে গিয়েও দীর্ঘ সময় পেরিয়ে ফের নয়া শিক্ষা সফর সত্যিই শিহরণ জাগায়। ঝাড়খণ্ডের চৈবাশা মহিলা কলেজ থেকে সংস্কৃত নিয়ে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট গ্র্যাজুয়েট হন ডাঙ্গি। ঝাড়খণ্ড সরকারের পক্ষ থেকে কোলহান বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হিসেবে মনোনীত হন, ৩ বছর ছাত্রদের প্রতিনিধিত্ব করেন। এরপর সংস্কৃতে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট। ততদিনে ডাঙ্গির ঝুলিতে অজস্র পুরস্কার। জীবনের সাথে জুড়ে গেছে সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, রিসার্চ পেপার।
৩৭ বছর বয়সে ইউনিভার্সিটি গ্র্যান্ড কমিশন (UGC) আয়োজিত ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি টেস্ট (NET) ও পিএইচডির প্রবেশিকা পরীক্ষা (RET) উত্তীর্ণ হয়ে সংস্কৃত-সাঁওতালির আন্তঃসম্পর্ক নিয়ে ‘ডিলিট’ (Dlitt on Sanskrit-Santhali ‘interlinks’) করার পরিকল্পনা ডাঙ্গির। আড়াই বছর আগে ঝাড়খণ্ড পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় পাশ করে কোলহান ইউনিভার্সিটিতে সংস্কৃতে ফ্যাকাল্টি মেম্বারের পদে রয়েছেন তিনি। “পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ছাত্র-ছাত্রীদের সংস্কৃত পাঠ করাচ্ছে প্রত্যন্ত গ্রামের সেই সাঁওতালি মেয়েটি। একজন জ্ঞানপিপাসুর সবচেয়ে বড় সফলতা তো এখানেই”, মৃদু হেসে নিজের মুখেই অকপট স্বীকারোক্তি ডাঙ্গি সোরেনের।