আজ বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস
প্রতি বছর 14 নভেম্বর এই দিনটি পালন করা হয়। উদ্দেশ্য হল, ডায়াবেটিস সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধি। সে জন্য এই দিনটিকে গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
মনে রাখতে হবে, বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ মানুষ এই রোগে ভূগছেন। অনেকে জানেন । অনেকে জানে না। তাই ডায়াবেটিস প্রতিরোধ, প্রাথমিক রোগ নির্ণয়, উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার উপরে জোর দেওয়া হয়।
এই বছরের ডায়াবেটিস ডে-এর থিম হল ‘ব্রেকিং ব্যারিয়ারস, ব্রিজিং গ্যাপস,’ অর্থাৎ ডায়াবেটিস রোগ নির্ণয়ের ব্যাপারে যে বাধা তা অতিক্রম করতে হবে, রোগ প্রতিরোধের বিষয়ে যে ফাঁকফোকর আছে তা ভরাট করতে হবে।
ডায়াবেটিসের লক্ষণ
ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলি হঠাৎ দেখা দিতে পারে।
যদিও টাইপ 2 ডায়াবেটিসে, তারা ধীরে ধীরে ছড়ায়। কখনও কখনও এটি বুঝতে কয়েক বছর সময় লাগে। সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে তেষ্টা বৃদ্ধি, ঘন ঘন প্রস্রাব, ঝাপসা দৃষ্টি, ক্লান্তি এবং বিনা কারণে ওজন কমে যাওয়া।
যদি চিকিৎসা না করা হয়, ডায়াবেটিস হৃৎপিণ্ড, চোখ, কিডনি এবং স্নায়ুর মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলির রক্তনালীগুলির ক্ষতি করতে পারে। এটি হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, কিডনি ফেলিওর এবং কিছু ক্ষেত্রে রেটিনার ক্ষতি করে। ফলে, দৃষ্টিশক্তি হ্রাস সহ গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়। এ ছাড়াও ডায়াবেটিস স্নায়ুর ক্ষতি এবং পায়ে দুর্বল সঞ্চালনের কারণ হতে পারে। যার ফলে আলসার এবং, সম্ভবত, অঙ্গচ্ছেদ হতে পারে।
কিভাবে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করবেন?
টাইপ 2 ডায়াবেটিস প্রতিরোধ বা তা থেকে ধীরে ধীরে রেহাই পেতে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে হবে।
প্রতিরোধের জন্য সুপারিশগুলির মধ্যে রয়েছে একটি স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা। প্রতিদিন কমপক্ষে 30 মিনিটের পরিমিত ব্যায়াম করা। শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকুন। শর্করা এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাট কম, এমন সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। তামাক, মদ ব্যবহার এড়িয়ে চলুন।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধে ভারতে সরকারি উদ্যোগ
ভারত সরকার জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের (NHM) অধীনে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য বৃহত্তর জাতীয় কর্মসূচির অংশ হিসাবে ডায়াবেটিস মোকাবেলায় বেশ কয়েকটি সক্রিয় পদক্ষেপ চালু করেছে।
১) ভারত সরকার, NP-NCD-এর অধীনে, জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের (NHM) মাধ্যমে রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে প্রযুক্তিগত এবং আর্থিক সহায়তা প্রদান করে।
২) ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনার উপর ফোকাস সহ রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রস্তাবের ভিত্তিতে সহায়তা বরাদ্দ করা হয়।
৩) 743টি জেলা এনসিডি ক্লিনিক এবং 6,237টি কমিউনিটি হেলথ সেন্টার এনসিডি ক্লিনিক স্থানীয়-স্তরের যত্ন এবং অ্যাক্সেসযোগ্য পরিষেবাগুলি নিশ্চিত করতে ভারত জুড়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
৪) স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্য পরিষেবা শক্তিশালী করায় জোর দিয়েছে। প্রাথমিক রোগ নির্ণয় এবং রেফারেলের সুবিধার উপরেও জোর দেওয়া হয়েছে।
৫) একটি জনসংখ্যা-ভিত্তিক স্ক্রিনিং করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের কাজ চলছে। 30 বছরের বেশি ব্যক্তিদের স্ক্রিনিং করার কাজ আয়ুষ্মান আরোগ্য যোজনায় করা হচ্ছে।
৬) জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য দিবস পালনের মাধ্যমে ডায়াবেটিস সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা হয়।
৭) সামঞ্জস্যপূর্ণ সম্প্রদায় সচেতনতা এবং শিক্ষা নিশ্চিত করতে প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক এবং সামাজিক প্ল্যাটফর্ম সহ বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করা হয়।
৮) যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া মন্ত্রকের নেতৃত্বে ফিট ইন্ডিয়া আন্দোলন এবং আয়ুষ মন্ত্রকের যোগব্যায়াম কর্মসূচির প্রসারের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর জীবনধারাকে উৎসাহিত করা চলছে।
৯) NP-NCD-এর অধীনে, রাজ্যগুলি তাদের কর্মসূচি বাস্তবায়ন পরিকল্পনা অনুযায়ী ডায়াবেটিস সচেতনতা কর্মসূচির জন্য আর্থিক সহায়তা পায়।
১০) প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা ছাড়াও, NP-NCD রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির অনুরোধ অনুসারে গ্লুকোমিটার এবং ডায়াবেটিসের ওষুধ কেনার জন্য আর্থিক সহায়তাও দেয়। এনএইচএম-এর ফ্রি ড্রাগস সার্ভিস ইনিশিয়েটিভ অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল গোষ্ঠীকে ইনসুলিন সহ বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করে।
১১) প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় জন ঔষধী পরিকল্পনা (PMBJP) এর মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সহযোগিতায় ইনসুলিন সহ মানসম্পন্ন জেনেরিক ওষুধগুলি সাশ্রয়ী মূল্যে পাওয়ার বন্দোবস্ত হয়েছে।
এবার জানাই সারা বিশ্বের ডায়াবেটিস সংক্রান্ত কিছু তথ্য।
এই মুহূর্তে বিশ্বজুড়ে ৮০ কোটির বেশি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। আগের হিসাবের তুলনায় যা প্রায় দ্বিগুণ। চিন্তার বিষয় হল, এঁদের মধ্যে ৩০ বছর বয়সী রোগীদের অর্ধেকের বেশি চিকিৎসা করাচ্ছেন না। সাম্প্রতিক এক গবেষণা প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গিয়েছে বলে বিবিসি উল্লেখ করেছে।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ১৯৯০ সাল থেকে বিশ্বে ডায়াবেটিসের হার ৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৪ শতাংশ হয়েছে। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে আক্রান্তের হার বাড়ার প্রবণতা বেশি দেখা গেছে।
ডায়াবেটিক রোগীদের খাবারের বিষয়ে কিছু কথা কথা-
মাখন, ঘি, মিষ্টি, সব রকমের মিষ্টিস্বাদযুক্ত খাবার যেমন, চিনি, মধু, গুড়, লজেন্স, আইসক্রিম, কেক, পেস্ট্রি, ফলের রস, নরম পানীয়, অ্যালকোহল, স্বাস্থ্যকর পানীয়, তেলেভাজা, শিঙাড়া, কচুরি, চপ, কাটলেট থেকে দূরে থাকাই ভাল। তবে প্রত্যেক ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্যতালিকা পৃথক হবে। বয়স, ওজন ও উচ্চতা, কাজের ধরন, কায়িক শ্রমের পরিমাণ, জীবনযাপন পদ্ধতি, আর্থিক অবস্থা সবকিছু বিবেচনায় এনে এ তালিকা করা হয়।
ডায়াবেটিস হলেই সব খাওয়া নিষেধ, তা নয়। তবে খাদ্য বাছাইয়ে সতর্ক ও সুশৃঙ্খল হতে হবে। পুনরাবৃত্তি ও বিরক্তি ঠেকাতে রোজ একই ধরনের খাবার না খেয়ে বৈচিত্র্য আনারও চেষ্টা করতে হবে। অন্যান্য সাধারণ মানুষের মতো একজন ডায়াবেটিস রোগী সব কটি খাদ্য উপাদান মানে শর্করা, আমিষ, চর্বি, খনিজ, ভিটামিন ইত্যাদি গ্রহণ করবেন। ডায়াবেটিস ধরা পড়লে প্রথমেই যা করা দরকার তা হলো সাদা চিনিযুক্ত সব খাবার বর্জন করা। চিনি বা শর্করা অন্যান্য খাবারেও আছে, তাই সরাসরি চিনি বাদ দিলে ক্ষতি নেই। শর্করা খাবার হলো ভাত, রুটি, নুডলস ইত্যাদি। এসব সীমিত পরিমাণে খেতে হবে এবং সাদা চাল ও আটা বা ময়দার পরিবর্তে লাল চাল ও আটা খাওয়া ভালো। এতে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বা জিআই কম।