আমুদরিয়া নিউজ : দিনের শুরু চা, কফি যা কিছু দিয়ে শুরু হতে পারে। সেটা হয়ও। কিন্তু লাঞ্চ বা ডিনারে ইন্ডিয়ান যে কোন ক্যুইজিনের স্বাদ, গন্ধে ফোঁড়ন আর কারিতে মশলা না থাকলে তা মুখে তোলা যায়!
হ্যাঁ, একদিকে তেল, নুন, চিনির ঠিকঠাক ব্যালেন্স, অন্যদিকে রাঁধুনির পাকা হাতের আন্দাজে হলুদ, লঙ্কা, ধনে, জিরে, মৌরি, গরম মশলার অনবদ্য মিশেল ঘটলেই হাসিমুখ ফুটতে বাধ্য যে কোন আমিষ কিংবা নিরামিষ ভোজনরসিকের। জানেন কি এই মশলার হাত ধরেই প্রাণ ফিরে পায় প্রায় অচল হয়ে যাওয়া এক সংসার?
আজকের গল্প তাঁদের নিয়েই।
এখন কিছুটা স্বচ্ছল হলেও ১২ বছর আগে সহজ ছিল না উদয়পুরের দিন আনা দিন খাওয়া দম্পতি পঞ্চাশোর্ধ্ব ধনুদেবী আর তাঁর ষাটোর্ধ্ব স্বামী রামলালের পক্ষে। পরিবারে আরও একজন সদস্য তাঁদের ছেল। যার কোন রোজগার ছিল না। এই পরিস্থিতিতে একজন শ্রমিক হিসেবে যে আয় হয়, তা দিয়ে তিনজনের সংসার ঠিকঠাক চালানো মুশকিল হয়ে পড়ে রামলালের।
একদিন ভিলওয়ারাতে শুকনো লঙ্কার একটি মশলা কারখানায় গিয়ে সেখানকার প্রক্রিয়াকরণ দেখার সুযোগ হয় ধনুদেবীর। সেখানে সুপারভাইজাররা তাঁকে মেশিন কিনে মশলা প্যাকেজিং করে ব্যবসা শুরু করার কথা বলেন। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় প্রাথমিকভাবে শুরু করার মত টাকা। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন আহমেদাবাদে থাকা ধনুদেবীর জামাইবাবু। একটি গ্রাইন্ডার মেশিন কেনেন ধনু। সেলফ হেল্প গ্রুপের ৩০ হাজার টাকার ঋণ নিয়ে রকমারি মশলা দিয়েই শুরু করেন জীবনের সেকেন্ড ইনিংস।
কর্মহীন হওয়ায় প্রথমদিকে হতাশায় ভুগতেন এই দম্পতির ছেলে। তবে আশা হারাননি ধনু-রামলাল। বাবা-মায়ের সাথে মশলা বিক্রির জীবিকাতেই স্বনির্ভর হন ছেলে। সেলফ হেল্প গ্রুপের মিটিংগুলিতে অন্যান্য মহিলাদের সাথে দেখা করে তাদের স্বনির্ভর হওয়ার গল্প শোনেন ধনুদেবী। সবার মধ্যেই কাজ করতে চাওয়ার, পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর একটা তাগিদা দেখতে পান। বর্তমানে স্বামী ও ছেলের অনুপস্থিতিতে একাই দোকান চালাতে পারেন ধনু।
৩০ হাজার টাকা থেকে জার্নি শুরু করে এখন মশলার ব্যবসার পাশাপাশি নিজস্ব গ্রসারি শপের মালিক হয়েছেন। উপার্জনের মুখ দেখেছে গোটা পরিবার। এই ব্যবসাই যে ধনুদেবীকে শক্তিশালী আর স্বাধীন করে তুলেছে, সেলফ হেল্প গ্রুপের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে অকপটে স্বীকার করেন তিনি। এখন সেই ব্যবসাকে আরও বাড়ানোর পরিকল্পনায় রয়েছেন তাঁরা।
প্রতিবেদক : অন্তরা মোদক