ওয়েব ডেস্ক : সে লম্বায় প্রায় ১৪ ফুট। তার ওজন ১২২৫ কেজি। তার নাম ভ্লাদিমির। তাঁর শরীরের মধ্যে যন্ত্র বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সে জলের গভীরে মাইলের পর মাইল চড়ে বেরিয়ে এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাতায়াত করত। সাবমেরিন, ডুবোজাহাজ সহ নানা দেশের জলযানের তথ্য তুলে নিতে ভ্লাদিমিরের দেহে বসানো যন্ত্র।
কে ভ্লাদিমির!
এটি একটি বিশাল আকৃতির তিমি। 2019 সালে উত্তর নরওয়েজিয়ান দ্বীপ ইঙ্গোয়ার কাছে জেলেরা প্রথম এটিকে দেখেছিল। বেলুগা প্রজাতির তিমিটি ১৫ বছর বযসে মারায় যায়। তার দেহ থেকে কিছু যন্ত্র মেলার পরেই বোঝা যায় আদতে এটিকে গুপ্তচর হিসেবে ব্যবহার করা হতো। এচটিকে রাশিয়ার গুপ্তচর হিসেবে সন্দেহ করা হয়। নরওয়েতে রাশিয়ার জলসীমার কাছে সন্দেহজনক পরিস্থিতিতে মৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল ভ্লাদিমিরকে।
হ্যাঁ, আজ গুপ্তচর বৃত্তি নিয়ে কিছু বলব।
ভারতে গুপ্তচরবৃত্তির ইতিহাস অনেক প্রাচীন। কৌটিল্য তো গুপ্তচর হিসেবে নানাজনকে নিয়োগের পরামশর্ দিতেন। সে সময়ে ভারতীয় রাজা-সম্রাট-বাদশারা পায়রাকে ট্রেনিং দিয়ে গুপ্তচর বৃত্তি করাতেন। অনেক সময়ে পতিতাদের দিয়েও গুপ্তচর বৃত্তি করানো হতো।
আমাদের মূল আলোচ্য বিষয় হল, মানুষ ছাড়া কাকে কাকে দিয়ে গুপ্তচর বৃত্তি করানো হয়ে তাকে।
এতদিন আমরা জানতাম শুধু পায়রাকেই পায়ে চিরকুট বেঁধে, ছোট ক্যামেরা দিয়ে নানা খবরের আদানপ্রদান, সংগ্রহ করা হতো। কিন্তু, রাশিয়া দেখিয়ে দেয় তিমিকে ধরে প্রশিক্ষণ দিয়ে গুপ্ত হিসেবে কাজ করানো যায়। জডলপিন তো অনেকভাবেই গুপ্তচর হিসেবে কাজ করে থাকে। যদিও রাশিয়ান নৌবাহিনী দাবি করেছিল, ভ্লাদিমিরকে প্রতিবন্ধী শিশুদের থেরাপিতে সহায়তা করার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল।
গুপ্তচর হিসেবে বিড়ালের ব্যবহারও নতুন কিছু নয়। বিড়ালের পায়ে বা কানে গোপন শব্দ সংগ্রহের যন্ত্র বসিয়ে তাকে শত্রুপক্ষের অফিসারদের ঘরের কাছাকাছি ছেড়ে দেওয়ার অনেক ঘটনা আছে। বিড়াল ঘরের আনাচে কানাচে ঘোরাফেরা করলেও অফিসাররা সন্দেহ করবেন না। কিন্তু, বিড়াল ঘরে থাকলে সে সময়ে কোনও ঈলোচনা হলে বিডালের কানে বসানো যন্ত্রে তা রেকর্ড যাবে।
কাজেই অচেনা, অজানা বিড়াল ইইতে সাবধান থাকাই ভাল।
১৯৬০ সালে ডলফিনকে গুপ্তচর হিসেবে ব্যবহার করেছে আমেরিকান গুপ্তচর সংস্থা। ব্রিটিশ গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুসারে, রাশিয়া শত্রু ডুবোজাহাজ সনাক্ত করতে এবং “প্রতিরোধ” করতে ডলফিনদের প্রশিক্ষণ দেয়। মনে রাখতে হবে, ডলফিন বিশ্বের সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণীদের মধ্যে পরিচিত।
এবার ইঁদুর। এই গণেশ চতুর্থীতে ববাজীর বাহন হিসেবে পরিচিত ইঁদুরকে গুপ্তচর হিসেবে ব্যবহারের অভিনব ঘটনা দিয়ে। তাও জীবিত ইঁদুর নয়। মৃত ইঁদুরের দেহের মধ্যে যন্ত্র হসিয়ে তা শত্রু শিবিরে ফেলে দেওয়া। সেই যন্ত্র, লুকানো ক্যামেরায় যা রেকর্ড হবে সেটা থেকে শত্রুদের গতিবিধির আঁচ করা। ওই মৃত ইঁদুরগুলি যাতে বিড়ালরা খেয়ে না ফেলে সে জন্য এমন কিছু কেমিকাল মেশানো হতো যাতে তা খেতে না চায় বিড়ালরা।
এবার শেষ করছি পায়রা দিয়েই।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে পায়রার পায়ে বেঁধে রাখা হতো গোপন নোট। এই গোপন বার্তাগুলির মধ্যে অনেকের মধ্যে নাৎসি সৈন্যদের গতিবিধি, জানা যেত। দ্য সিক্রেট পিজিয়ন সার্ভিসের লেখক গর্ডন কোরেরার মতে, ব্রিটিশ গোয়েন্দারা ১৯৪১ এবং ১৯৪৪ সালের মধ্যে ফ্রান্সের বোর্দো থেকে ডেনমার্কের কোপেনহেগেন পর্যন্ত নাৎসি-অধিকৃত ইউরোপে ১৬০০০ গুপ্তচর কবুতর ফেলে দিয়েছিল।
তারা সেখান থেকে নিজেদের পায়ে থাকা যন্ত্রের মাধ্যমে লন্ডনে প্রায় ১০০০টি বার্তা পাঠিয়েছে। আবার নিজেরা ঘরেও ফিরেছে। পায়রার এমন ক্ষমতা আছে।
বছর পাঁচেক আগে কাশ্মীরের গ্রামবাসীরা একটি পায়রাকে পাকিস্তানের একটি গুপ্তচর বলে সন্দেহ করেছিল। যে পাখিটিকে বন্দী করা হয়েছিল তার সাথে একটি রিং পাওয়া গেছে যার সাথে কয়েকটি সংখ্যা ছিল। গ্রামবাসীরা কবুতরটিকে স্থানীয় পুলিশের কাছে দেয়। ২০১৬ সালের অক্টোবরে, আরেকটি কবুতর পাওয়া গিয়েছিল যাতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে হুমকি দেওয়া একটি নোট ছিল। দু বছর আগে মে মাসে, মুম্বাইতে পাওয়া একটি কবুতরকে চিনা গুপ্তচর সন্দেহে আট মাসের জন্য আটকে রাখা হয়েছিল। গুপ্তচর পায়রার পায়ে আংটি বাঁধা ছিল। এর ডানার নিচের দিকে চাইনিজ লেখা দেখা গেছে। কর্তৃপক্ষ শেষ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে এটি একটি তাইওয়ানের রেসিং বার্ড। সেটিকে ছেড়ে দেয়।
তবে শেষ করার আগে বলি, বিড়াল দখলেই গুপ্তচর ভাববেন না। পায়রা দেখলেই স্পাই ভাবার দরকার নেই।
এরা আমাদের অনেক উপকারও করে। এরা কথা বলতে পারলে বিনা অনুমতিতে এদের দিয়ে স্পাইং করানোর ক্ষমতা মানুষের হতো না।