আমুদরিয়া নিউজ ডেস্ক : আফগানিস্থানে মেয়ের চলাফেরা, কথা বলার উপরে নানা বিধি নিষেধ আরোপের বিরোধিতায় ইন্টার ন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসের দ্বারস্থ হচ্ছে চারটি দেশ। এই চারটি দেশ হল কানাডা, অষ্ট্রেলিয়া, জার্মানি এবং নেদারল্যান্ড। একযোগে চার দেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক আদালতে আফগানিস্থানের নারীদের অধিকারের দাবি আদায়ের জন্য যে আবেদন হচ্ছে তাতে মূল ভূমিকা নিয়েছেন তিন দেশের তিনজন বিদেশ মন্ত্রী। তাঁরা হলেন, অষ্ট্রেলিয়ার পেনি ওঙ, জার্মানির আন্নালিনা বেয়ারবক, কানাডার মিলানি জোলি। নেদারল্যান্ডের বিদেশমন্ত্রী ক্যাসপার ভেলডক্যাম্প ওই তিনজনকে সমর্থন করেছেন।
আন্তর্জাতিক আদালতে কোনও দেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তখনই দায়ের করা যায়, যদি দেশটি আন্তর্জাতিক আদালতের আওতাভুক্ত দেশ হয়। আফগানিস্থান আন্তর্জাতিক আদালত ভুক্ত দেশ হিসেবে নিজেদের দাবি করে এবং সদস্যও। আইনজীবীদের মতে, তাই কোন দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন বা অন্য কোনও অভিযোগে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা হলে তা নিয়ে দেশটিকে ব্যাখ্যা দিতে হয়। সাধারণত, আন্তর্জাতিক আদালত ব্যাখ্যা চাইলে ৬ মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট দেশটিকে দিতে হবে।
যদি কোনও কারণে না দেওয়া হয়, তবে আন্তর্জাতিক আদালতের অধীনে থাকা অন্য দেশগুলি সে ক্ষেত্রে সম্মিলিতভাবে নানা পদক্ষেপ করতে পারে। প্রয়োজনে দেশগুলি সম্মিলিতভাবে অভিযুক্ত দেশের সঙ্গে নানা সম্পর্ক, লেনদেন বন্ধ করে দিতে পারে। তাতে দেশটি একঘরে হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামরিক ক্ষেত্রেও সমস্যায় পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।
২০২১ সালে আফদানিস্থানে তালিবানরা ক্ষমতাসীন হওয়ার পরে মেয়েদের চলাফেরা, কথা বলার উপরে বিধি নিষেধ জারি করে। প্রকাশ্যে মুখ দেখানো, উচ্চ শিক্ষা বন্ধ করে দেওয়া মেয়েদের। পার্কে যাওয়া, গানবাজনায় অংশ নেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়। পরিবারের পুরষ সঙ্গী ছাড়া ৭২ কিলোমিটারের বেশি দূরের যানবাহনে মেয়েদের তোলা নিষিদ্ধ হয়।
এই ঘটনায় গোটা পৃথিবীতে আলোড়ন পড়েছে। নানা দেশের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানানো হয়েছে। দেশের অর্ধেক জনসংখ্যা নারীরা কেন সমানাধিকার থেকে বঞ্চিত হবে সেই প্রশ্ন উঠেছে। সম্প্রতি আমেরিকায় রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ সভার অধিবেসনের সময়ে এক আলোচনাসভায় অভিনেত্রী গায়িকা মেরিল স্ট্রিপ রাষ্ট্রনেতাদের সামনেই আক্ষেপ করে বলেছেন, আফগানিস্থানে পাখিরা গান গাইতে পারবে কিন্তু মেয়েরা নয়, এটা কেমন ব্যাপার! আফগানিস্থানে কাঠবিড়ালি পার্কে ছুটোছুটি করতে পারবে, মেয়েরা নয়। আধুনিক সভ্য সমাজে এটা হতে পারে না। এখন আন্তর্জাতিক আদালতে আফগানিস্থানের শাসক তালিবানরা কী ব্যাখ্যা দেন, আর আফগান মেয়েরা কবে সেখানকার পুরুষদের মতো সমান অধিকার পান সেটাই এখন দেখার বিষয়।