আমুদরিয়া নিউজ : আজ গোলাপ দিবস। সকলেই নিজের ভালবাসার মানুষকে গোলাপ দিয়ে প্রেম নিবেদন করেন। গোলাপ, এক কথায় প্রেমেরই প্রতীক। সেই গোলাপ নিয়েই আজ একটু অন্যরকম একটা গল্প জানবেন আপনারা। এটা ৬৫ গোলাপের কাহিনী। শুনলে একটু অবাক হবেন, ৬৫ গোলাপ মানে ৬৫ টা গোলাপ ফুল নয়। গোলাপ যখন একটা রোগের প্রতীক হয় তখনই শুরু হয় এই কাহিনী। শুনুন তবে।
১৯৬৫ সালে এই কাহিনী শুরু হয় যখন চার বছর বয়সী রিচার্জ তার রোগের নাম শুনে সিস্টিক ফাইব্রোসিস সিক্সটি ফাইভ রোজেস বলে উচ্চারণ করে। আজ এই রোগে আক্রান্ত সকল শিশুরা নিজের রোগের নাম বলতে গেলে সিক্সটি ফাইভ রোজেস ই বলে।
কি এই সিস্টিক ফাইব্রোসিস?
ডাক নামটা যতটাই মিষ্টি, রোগটা ততটাই ভয়ঙ্কর। এটি আমেরিকার একটি বংশগত রোগ। প্রতি ২৫০০ শিশুর জন্মে একজন এই রোগে আক্রান্ত হয়। আমেরিকায় প্রায় ৩০ হাজার মানুষ এই রোগে আক্রান্ত, যাদের গড় আয়ু মাত্র ৩২ থেকে ৩৫ বছর।
এই রোগে প্রোটিন ঘন ও আঠালো হয়ে ফুসফুস, শ্বাসনালী, অগ্ন্যাশয় ও অন্যান্য অঙ্গে জমতে থাকে। এর প্রভাবে শ্বাসকষ্ট বাড়তে থাকে, হজম শক্তিও কমে যায়। দুর্ভাগ্যবশত এর কোন পূর্ণ প্রতিরোধক ওষুধ এখনও তৈরি হয়নি।
এবার ফেরা যাক সে বেদনাদায়ক কাহিনীতে।
১৯৬৫ সালে আমেরিকার বাসিন্দা মেরি জি ওয়েইস জানতে পারেন যে তার তিন ছেলের সিএফ( সিস্টিক ফাইব্রোসিস) হয়েছে। তিনি নানা জায়গায় আর্থিক সহায়তার জন্য যোগাযোগ করতেন। ঠিক একদিন একজনের সাথে ফোনে কথা বলার সময়, তার চার বছরের ছেলে রিচার্ড কথাগুলো শুনে নেয়। ফোন রাখার পর সে তার মাকে বলে আমি জানি তুমি কিসের জন্য কাজ করছো। মেরি ভয় পেয়ে যায়। রিচার্ড যখন তাকে বলে যে তুমি ৬৫ টি গোলাপের জন্য কাজ করছ, মেরি অবাক হয়ে যায়।
সে রিচার্ড কে জানায় যে সে ৬৫ টি গোলাপের জন্যই কাজ করছে। এই বলে তার চোখে জল চলে আসে। কাহিনীর সব থেকে কষ্টের বিষয়টি হল, রিচার্ড ২০১৪ সালে সি এফ এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে হেরে যান। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে মারা যান। মেরি তার সন্তানদের স্মৃতিকে আগলে রাখার জন্য সিএফ ফাউন্ডেশনকে বহু উপহার ও সাহায্য প্রদান করেন। আজ এই ফাউন্ডেশন সিস্টিক ফাইব্রোসিসে আক্রান্ত মানুষদের জন্য অবিরাম কাজ করে চলেছে।
সিক্সটি ফাইভ রোজেস কাহিনীটি বহু মানুষকে আবেগপ্রবণ করে দিয়েছে। গোলাপ যাকে সাধারণত আমরা প্রেমের প্রতীক হিসেবে চিনি, এখন এক রোগেরও প্রতীক হয়ে উঠেছে।
সেই ঘটনার প্রায় ৬৫ বছরে পরে ৫ই জুন দিনটিকে ফাউন্ডেশনটি গোলাপ দিবস হিসেবে পালন করে। সকল মানুষের কাছে তাদের একটাই অনুরোধ এই রোগের চিকিৎসার জন্য যাতে মানুষ তাদের সহায়তা করে এবং তাদের পাশে থাকে। ৬৫ গোলাপ যেন কারও জীবনে খারাপ দিন না নিয়ে আসে, প্রত্যেক শিশুর জীবনই যেন গোলাপের মতো সুন্দর হয়।
এটাই তাদের প্রার্থনা।
২০১৬ সালে মেরিও মারা যান।
প্রতিবেদক : শিউলি ভট্টাচার্য্য