বিটিএস মানেই একটা দারুণ জমজমাট ব্যাপার। তা নিয়ে আমুদরিয়া নিউজের ধারাবাহিক প্রতিবেদন শুরু হয়েছে। আজ দ্বিতীয় পর্ব
আমুদরিয়া নিউজ:
বিটিএস এর সাথে বেশ কিছু মজার ঘটনা যুক্ত। যা হয়ত আপনাদের অনেকেরই অজানা। প্রথমেই শুরু করি এই দল গড়ার ইতিহাস নিয়ে।
বিশ্ববিখ্যাত এই পপ গ্রুপ কিন্তু একদিনেই তৈরি হয়ে যায়নি। বিগ হিট এন্টারটেইনমেন্ট এ আসার আগে বিটিএস ছিল একেবারেই সাধারণ একটি পপ গ্রুপ। যাদের রাস্তায় পারফর্ম করতে দেখা যেত।
কি? অবাক হলেন তো? নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন এই লড়াই, তাদের জন্য মোটেই সহজ ছিল না। তবে একে একে জেনে নিন, বিখ্যাত হওয়ার আগে কেমন ছিল এই সাতজন সদস্যের জীবন।
আরএম কে দিয়ে শুরু করি। কিম নামজুন ছিলেন বিটিএস এর প্রথম সদস্য এবং ব্যান্ডের লিডার। ষষ্ঠ শ্রেণী থেকেই তিনি র্যার্পিং শুরু করেন এপিক হাই এর ফ্লাই শোনার পর থেকে। ২০০৭ সালে মিডল স্কুলে থাকাকালীন তিনি একটি গ্রুপে যোগদান করেন র্যা পার হিসেবে। তার পর থেকে তিনি সোলো গায়ক হিসেবে একের পর এক গান রিলিজ করতে থাকেন। একটি হিপহপ এজেন্সির অডিশনে নামজুনের র্যা পিং শুনে খুশি হয়ে সেই শো এর প্রডিউসার তাঁকে বিগ হিট এন্টারটেইনমেন্টে অডিশন দিতে পরামর্শ দেন। ব্যস, তার পর ২০১০ সালে আরএম হয়ে যান বিটিএস এর প্রথম সদস্য এবং বাকিটা ইতিহাস।
এবার আসি জাংকুক এ। দেখে মনে না হলেও, জাংকুক কিন্তু ব্যান্ডের সবচেয়ে ছোট সদস্য। কুকি নামে পরিচিত এই সদস্য বিটিএস এর মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয়। তবে তাঁর বিটিএস এ যোগ দেওয়ার কারণ জানলে অবাক হবেন।
তার জন্মস্থল বুসানে প্রথম তিনি সুপারস্টার কে নামক একটি শো এর তৃতীয় সিজনে অডিশন দেন। যেখানে তিনি এলিমিনেট হয়ে গেলেও সেখান থেকে তাঁর পরিচিতি বাড়ে। যার ফলে নানা এজেন্সি থেকে তাঁকে অনেক অফার দেওয়া হয়। তবে অবশেষে জাংকুক বেছে নেন বিগহিট এন্টারটেইনমেন্ট কে।
জানেন কেন? কারণ তিনি আরএম এর র্যার্পিং এ মুগ্ধ হয়েছিলেন। ফলে তিনি আরএম এর সাথে ট্রেনিং নিতে অনুপ্রাণিত হন। তাই বলা হয় বিটিএস এ আজ জাংকুক আছে, তার কৃতিত্ব আরএম এর। আশা করি আপনারাও বুঝতে পারছেন যে জাংকুকের কথায় যুক্তি আছে বটে। এমন কোনো আর্মি আছে কি যে আরএম কে দেখে মুগ্ধ হয় না?
ভি, যিনি পরপর চারবার বিশ্বের সবচেয়ে সুদর্শন পুরুষ হিসেবে উঠে এসেছেন, এবার তাঁর কথা জেনে নেই।কিম তাইহিউং এর বাবা ছিলেন কৃষক। বাবার পরামর্শ মত হাইস্কুলেই স্যাক্সোফোন বাজানো শুরু করেন তিনি। তার পরেই এক বন্ধুর সাথে তিনি বিগহিট এন্টারটেইনমেন্ট এর একটি অডিশনে যান।
না না, নিজের জন্যে একেবারেই যাননি। বন্ধুর সমর্থক হিসেবেই হাজির হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেখানে গিয়ে অন্য আরেকটি গ্রুপের প্রেরণায় তিনি অবশেষে অডিশন দিয়ে বসেন। শেষে জানা যায় যে, ভি ছাড়া আর কেউই সেদিন নির্বাচিত হননি। কি মজার ব্যাপার, তাই না? তারপর ধীরে ধীরে তিনি বিটিএস এর একজন সদস্য হয়ে ওঠেন এবং এখন তিনি এই ব্যান্ডের একজন ভোকালিস্ট।
সুগার কিন্তু নিজের পরিচিতি গড়তে বেশি সময় লাগেনি। নিজের কলাকৌশলের জন্য তিনি আগে থেকেই স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয় ছিলেন। হাইস্কুলে গ্লস নামে তিনি র্যাপিং করতেন। এছাড়াও তিনি স্থানীয় আর্টিস্টদের জন্য বিট কমপোজ করতেন। তিনি জনপ্রিয় গায়কদের জন্য ট্র্যাক প্রস্তুত করা শুরু করেন। বিগ হিট এর অডিশনে তিনি যোগদান করেন একটি ফ্লায়ার দেখার পর। সেটিতে র্যাপ কম্পিটিশন হবে বলে লেখা ছিল। যার নাম দেওয়া হয়েছিল “হিট ইট”। সেই অডিশনে কিন্তু তিনি জয়ী হননি। তবে দ্বিতীয় স্থানাধিকারী হিসেবে এই কোম্পানি তাঁকে ট্রেনিং দেওয়া শুরু করে। যদিও সুগার প্রোডিউসারের চেয়ে বেশি কিছুই হতে চাননি। কিন্তু ক্রমেই ২০১০ সালে তিনি বিটিএস এ যোগদান করার সিদ্ধান্ত নেন।
জিনের কথা শুনলে সত্যিই মনে হবে যে আমরা জীবনে যা প্ল্যান করি, তা একেবারেই হয় না। আমরা ভাবি এক। হয়ে যায় আরেক। কিম সোকজিন ছিলেন বিটিএস এর চতুর্থ সদস্য। আসলে জিনকে অফার পাঠিয়েছিল এসএম এন্টারটেইনমেন্ট বলে একটি সংস্থা।
যাকে তিনি ভুয়ো ভেবে বিশেষ পাত্তা দেননি। থিয়েটার মেজর স্টুডেন্ট হিসেবে তিনি কখনোই কোনো গায়ক হওয়ার স্বপ্ন দেখেননি। তবে বিগ হিট এন্টারটেইনমেন্টের পক্ষ থেকে ডাকা হলে তিনি ভাবেন, অভিনেতা হিসেবে অডিশন দেবেন। তবে ওই যে বলে না,. বিধির বিধান কে খন্ডায়! এই সংস্থা তাঁকে ফুঁসলে বিটিএস এ ঢুকিয়ে দেন। আজ তিনি বিটিএস এর ভোকালিস্ট। আজ আমরা জিনকে ছাড়া বিটিএস এর কথা ভাবতেও পারি না।
জিমিন, যার পুরো নাম পার্ক জিমিন। ছিলেন বিটিএস এর শেষ মেম্বার। বুসান হাই স্কুলে পাঠরত জিনের নাচ দেখে শিক্ষক তাকে বিগহিট এন্টারটেইনমেন্টের অডিশনে যেতে বলেন। তার পর আর কি! সেখানে নির্বাচিত হয়ে সোলে এ চলে যান সোজাসুজি। শেষ মেম্বার হিসেবে কিন্তু জিমিনকে সবচেয়ে কম সময়ের জন্য ট্রেনিং নিতে হয়েছিল। তারপর ২০১৩ সালে বাকি মেম্বারদের সাথে ডেবিউ হয় তার।
এবার কথা বলি জে-হোপ কে নিয়ে। নাচের জন্য বিশেষ পরিচিত হওয়ায় তিনি তার শহরেই একটি ড্যান্স গ্রুপে যোগদান করেছিলেন। যার নাম ছিল নিউরোন। এরপর তিনি জেওয়াইপী এন্টারটেইনমেন্টের জন্য অডিশন দেন। প্রথম রাউন্ডে সিলেক্ট হলেও কিছু রাউন্ড পর আর টিকতে পারেননি তিনি। যার ফলে অবশেষে বিগহিট এন্টারটেইনমেন্টের অডিশনে গিয়ে তিনি বিচারকদের মন জয় করেন। নিজের নৃত্যকলা সহ ছন্দের জ্ঞানের জন্য জায়গা পেয়ে যান বিটিএস এ। তারপর তিনি আরএম ও সুগার সাথে র্যাপার হিসাবে যোগ দেন বিটিএস এ।
বলা বাহুল্য, এই ডেবিউ মাঝে আটকে গিয়েছিল এবং জে-হোপ প্রায় বাদ পড়ে গিয়েছিলেন। অবশেষে আরএম সংস্থাকে বোঝান যে, বিটিএস এ জে-হোপের মত সদস্য কতখানি দরকার। তারপর একসাথে এই ৭ জন বিশ্বব্যাপী নিজেদের কৃতিত্ব প্রদর্শন শুরু করেন। (চলবে)
প্রতিবেদক
সন্ধ্যা দত্ত, ইংরেজি অনার্সের স্নাতক। কনটেন্ট রাইটিং করেন।