আমুদরিয়া ডেস্কঃ সব ঠিকঠাক থাকলে, আগামীকাল, মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে শুনানি হবে আর জি করের তরুণী চিকিৎসককে খুন ও ধর্ষণের মামলার। সিবিআইয়ের তদন্তে কতটা অগ্রগতি হয়েছে জানা যাবে। এখনও অবধি যে তিনজনকে এই মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে, সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায় ও আর জি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ, টালা থানার ওসির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আর কে বা কারা যুক্ত সেটাও কিছুটা হলেও স্পষ্ট হবে। এই অবস্থায় এখনও পশ্চিমবঙ্গের নানা এলাকায় প্রতিবাদ কর্মসূচি জারি রয়েছে। যেমন কলকাতায় স্বাস্থ্যভবনের সামনে জুনিয়র ডাক্তারদের অবস্থান আন্দোলনও অব্যাহত।
আর জি কর কাণ্ড নিয়ে আমরা একটা টাইম লাইন :
ঘটনা সামনে এসেছে গত ৯ অগস্ট। সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ, আর. জি. কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সেমিনার হল থেকে একজন মহিলা ডাক্তারের মৃতদেহ অর্ধনগ্ন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। ৩১ বছর বয়সী এই ডাক্তারের দেহে মারাত্মক আঘাতের চিহ্ন ছিল। ময়না তদন্তে ধর্ষণের প্রমাণ পাওয়া যায়। যা জানাজানি হতেই গোটা দেশে তীব্র প্রতিবাদ শুরু হয়। বলা ভাল, সারা দেশকে নাড়িয়ে দেয়। ঘটনাটি রাত ৩টে থেকে ৬টার মধ্যে ঘটে বলে অনুমান।
তদন্তে জানা গিয়েছে, ওই তরুণী চিকিৎসককে প্রথমে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় এবং তার শরীরে যৌন নির্যাতনের স্পষ্ট চিহ্ন পাওয়া যায়। তার গলায় অস্থি ভেঙে যাওয়া, মুখে এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন, এবং যৌনাঙ্গে গুরুতর আঘাতের লক্ষণ ছিল। এ ছাড়াও, তার শরীর থেকে রক্তপাত হচ্ছিল, যা যৌন নির্যাতনের প্রমাণ বহন করে।
মৃতদেহের পোস্টমর্টেম রিপোর্টে ধর্ষণের প্রমাণ পাওয়া যায়। এই ঘটনা সারা দেশজুড়ে তীব্র প্রতিবাদের জন্ম দেয়।
এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে প্রথমে কলকাতা পুলিশের একজন সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে গ্রেফতার করা হয়। পরে আরজি করের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে। তার পরে টালা থানার ওসিকে।
ভয়ঙ্কর এই ঘটনার প্রতিবাদে কলকাতা সহ ভারতের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ শুরু হয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুলিশকে দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া শেষ করার নির্দেশ দেন। তিনি অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তির আশ্বাস দেন। কিন্তু মামলাটি সিবিআইকে দেয় কলকাতা হাইকোর্ট।
এর পরে হাসপাতাল ও কলেজের ছাত্রছাত্রীরা বিক্ষোভ শুরু করে। কলকাতা সহ সারা দেশে নারীরা মেয়েরা রাত দখল করো Girls’ claim of the night’) শিরোনামে রাস্তায় নামে। ডাক্তাররা সারা দেশে আন্দোলনে নামেন। ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জে পি নাড্ডার সঙ্গে দেখা করে এবং ডাক্তারদের বিরুদ্ধে হিংসা প্রতিরোধের লক্ষ্যে একটি বিশেষ কেন্দ্রীয় আইন তৈরির কথা বলেন। তাঁরা হাসপাতালগুলোকে নিরাপদ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করারও আহ্বান জানান। অপরাধের পর, সারা দেশে চিকিৎসা কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়ে গুরুতর উদ্বেগ উত্থাপন করে আবাসিক ডাক্তারদের ব্যাপক প্রতিবাদ এবং ধর্মঘটের প্রতিক্রিয়ার পরে, এই আবেদনটি করা হয়।
১৩ই আগস্ট, মহারাষ্ট্র রাজ্যে ৮,০০০ জনেরও বেশি ডাক্তার জরুরি পরিষেবা ব্যতীত সমস্ত চিকিৎসা স্থগিত করেছিলেন। নতুন দিল্লিতে, জুনিয়র ডাক্তাররা বড় বড় সরকারি হাসপাতালের বাইরে বিক্ষোভ দেখান।
ওই দিন কলকাতার সব সরকারি কলেজ হাসপাতালে জরুরি পরিষেবা স্থগিত ছিল।
লখনও ও গোয়াতেও তাই হয়।
১৪ই আগস্ট কলকাতা এবং ভারতের অন্যান্য শহরে “মেয়েরা রাত দখল করো” নামে কর্মসূচি নেয়। ১৫ অগস্ট স্বাধীনতা দিবসেও নানা এলাকায় বিক্ষোভ হয়। কলকাতা, শিলিগুড়ি সহ গোটা রাজ্যে মহিলারা রাস্তায় নেমে প্রায় রাতভর বিক্ষোভ দেখান, স্লোগান দেন।
১৫ আগস্ট, মধ্যরাতের কিছু পরে, কিছু দুষ্কৃতকারী আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে ব্যারিকেড ভেঙে হাসপাতালে ঢোকে। তারা হাসপাতাল চত্বরে ঢিল ছোঁড়ে এবং হাসপাতালের জরুরি বিভাগ সহ কিছু অংশে ভাঙচুর করে পালায়। পুলিশের কড়া সমালোচনা হয়। পরে পুলিশ ১৯ জনকে গ্রেফতার করে।
১৭ই আগস্ট সমস্ত হাসপাতালে দেশব্যাপী ধর্মঘট করে।
১৮ অগস্ট ইষ্টবেঙ্গল মোহনবাগান ক্লাবের ডার্বি ম্যাচ বাতিল করে রাজ্য সরকার। আশঙ্কা ছিল সেখানে প্রতিবাদ হবে আর জি কর কাণ্ডের।
এর পরে কলকাতার তিন প্রধান ক্লাবের বহু সমর্থক মিলে প্রতিবাদ মিছিলে সামিল হলে আলোড়ন পড়ে য়ায়।
২২শে আগস্ট, সুপ্রিম কোর্ট ডাক্তারদের ধর্মঘট তোলার আপিল করে।
দিল্লির এইমস, আরএমএল হাসপাতাল এবং সারা ভারত জুড়ে অন্যান্য সরকারি হাসপাতালের কর্মীরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করে। তবে পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসকরা ৫ দফা দাবিতে তাদের ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছেন।
২৭শে আগস্ট, পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ এবং বিরোধী দল নবান্ন অভিযান করলে ব্যাপক গোলমাল হয়। পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের কয়েকজন আহত হন।
২৮ অগস্ট রাজ্যে বনধ ডাকে বিজেপি। জনজীবন স্তব্ধ হয়ে যায়।
২ সেপ্টেম্বর, জুনিয়র ডাক্তাররা কলকাতা পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগের দাবিতে লালবাজারের দিকে মিছিল করেন। পুলিশ হেডকোয়ার্টার লালবাজারের সামনে ব্যারিকেড দেওয়ায় চিকিৎসকেরা রাস্তাতেই বসে পড়েন। পরে অবশ্য ডেপুটেশন দিতে পারেন।
এই ঘটনার পরে আন্তর্জাতিক মহলেও প্রতিবাদের আওয়াজ শোনা গিয়েছে। বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান, কানাডা, জার্মানি, ইংল্যান্ড, আমেরিকায় বসবাসকারী ভারতীয়দের পক্ষেও রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করা হয়।
এখনও অবধি যা জানা গিয়েছে, সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে এমন সব অভিযোগ উঠেছে তা ভয়ঙ্কর বললেও কম। মহিলা শুধু নয়, পুরুষদের সঙ্গেও জবরদস্তি সম্পর্কের অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে্। কয়েকদিন আগে একজন রূপান্তরকামীদের পক্ষে সওয়ালকারী অবিযোগ করেছেন, সন্দীপ ঘোষ অন্তত ৩ জন রূপান্তরকারীকে জবরদস্তি শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করেছেন। তাঁদের আঁচড়ে, কামড়ে দিয়েছেন।
এমন ভূরি ভূরি অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে। সঞ্জয়ের বিরুদ্ধেও। কাদের মদতে এত বাড়বাড়ন্ত সেটাই মানুষের ক্ষোভ বাড়িয়ে তুলছে।
সিবিআই কতটা কী করতে পারবে তা নিয়েও চলছে আলোচনা।