আমুদরিয়া নিউজ : আজ বিশ্ব স্ট্রোক দিবস। প্রতি বছর ২৯ অক্টোবর। সারা বিশ্বের অন্যান্যদের সাথে আমরা স্ট্রোক, এর লক্ষণ এবং স্ট্রোক থেকে বেঁচে যাওয়াদের সহায়তা করার বিষয়ে সচেতনতা বাড়াচ্ছি।
৮০ শতাংশ পর্যন্ত স্ট্রোক প্রতিরোধ করা যেতে পারে।
২০০৬ সালে প্রথম ওয়ার্ল্ড স্ট্রোক অর্গানাইজেশন জিনটি পালন শুরু করে। ২০১০ সালে স্ট্রোককে পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
এই দিনটি কেন পালন করা হয়!
স্ট্রোক দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য,
স্ট্রোক সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা।
স্ট্রোকের প্রতিকার ও প্রতিরোধ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে ধারণা সৃষ্টি করা।
এই দিবস কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা বোঝানোর জন্য একজন চিকিৎসক দুটি ঘটনার উল্লেখ করেছেন।
প্রথম ঘটনা- তাঁর এক আত্মীয়ের স্ট্রোক হয়েছিল। তাকে হার্টের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কারণ, আত্মীয়দের বাড়ির লোকদের ধারণা, স্ট্রোক একটা হার্টের রোগ। তাই তাকে হার্টের হাসপাতালে নেন।
দ্বিতীয় ঘটনা- একজন স্ট্রোক হওয়ার দুমাস পরে ডাক্তারের কাছে যান। কেন দেরি জানতে চাইলে তাঁরা কবিরাজের কাছে নিয়ে গিয়ে তেল মালিশ করিয়েছেন। সুস্থ হননি বলে এখন ডাক্তারের কাছে গেছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বব্যাপী যত অসংক্রামক ব্যাধি আছে, সেগুলোর মধ্যে মৃত্যুর দিক থেকে হৃদ্রোগের পরেই স্ট্রোকের অবস্থান।
শারীরিক অক্ষমতার জন্য স্ট্রোক সবচেয়ে বেশি দায়ী।
সারা পৃথিবীতে প্রতি বছর প্রায় দেড় কোটি মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। যাঁদের মধ্যে প্রায় ৭০ লক্ষের মৃত্যু হয়। বাকি ৮০ লক্ষ প্যারালাইজড হয়ে জীবন যাপন করেন।
তা হলে বুঝতে পারছেন স্ট্রোক কতটা বিপজ্জনক রোগ।
উন্নত বিশ্বের তুলনায় নিম্ন আয়ের দেশে স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি সাধারণত অনেক বেশি। স্ট্রোক যাদের হয় তাদের মধ্যে ৬০ বছরের উপরের বয়সীদের সংখ্যা বেশি। প্রতি ১০০ জনের স্ট্রোক হলে তার মধ্যে সাধারণত ৬০-৭০ জনই পুরুষ। বাকিরা মহিলা। তবে তুলনামূলকভাবে ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের বেশি স্ট্রোক হয়ে তাকে। যদিও সব বয়সেই স্ট্রোক হতে পারে।
মূলত হাই ব্লাড প্রেসার, ডায়াবেটিস কিংবা হৃদ্রোগ থাকলে বিপদ বেশি। তার উপরে ধূমপান, অ্যালকোহল বা অন্য কোনো তামাক খেলে স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
স্ট্রোকের কিছু প্রাথমিক লক্ষণ আছে।
হঠাৎ কারও শরীর এক পাশ অবশ হয়ে যাওয়া বা মুখ বেঁকে যাওয়া অথবা কথা জড়িয়ে যাওয়া স্ট্রোকের প্রধান লক্ষণ।
কখনো কখনো প্রবল মাথাব্যথা, যা আগে কখনো হয়নি, মাথা ঘোরানো কিংবা অজ্ঞান হয়ে যাওয়াও স্ট্রোকের অন্যতম লক্ষণ হতে পারে।
এ ধরনের লক্ষণ যদি কারও মধ্যে দেখা যায়, তা হলে তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। কারণ, প্রথম সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালে পৌঁছে চিকিৎসা শুরু হলে কিছু চিকিৎসার মাধ্যমে তাঁদের সুস্থ করে তোলা সম্ভব। কিন্তু সময় পার হয়ে গেলে মস্তিষ্কের কোষগুলো স্থায়ীভাবে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ফলে সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হতে পারে রোগী। এমনকি রোগীর মৃত্যুও হতে পারে।
স্ট্রোক মস্তিষ্কের একটি রোগ। মস্তিষ্কের রক্তনালির সমস্যার কারণে স্ট্রোক হয়ে থাকে। সমস্যা দুই ধরনের হতে পারে। কখনো কখনো রক্তনালি বন্ধ হয়ে যেতে পারে বা রক্তনালি ফেটে রক্তক্ষরণ হওয়ার কারণেও স্ট্রোক হতে পারে। স্ট্রোক কোনো দীর্ঘমেয়াদি রোগ নয়। এটা হঠাৎ করেই হয়। হঠাৎ করে কথা জড়িয়ে গেলে অথবা শরীরের কোনো অংশ অবশ হয়ে গেলে বুঝতে হবে, তাঁর স্ট্রোক হয়েছে। এ রকম হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ৪০ বছরের পর থেকে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়তে থাকে। বংশগতভাবেও স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
স্ট্রোক হলে আর কি করণীয়?স্ট্রোক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগীকে হাসপাতালে নিতে হবে। রোগী যাওয়ামাত্রই স্ট্রোক হয়েছে কি না, তা পরীক্ষার জন্য প্রথমেই মাথার সিটি স্ক্যান করতে হবে। রক্তক্ষরণের পর স্ট্রোক হলে সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে তৎক্ষণাৎ বোঝা যায়। কিন্তু রক্তনালি বন্ধের পর স্ট্রোক হলে তাৎক্ষণিকভাবে সিটি স্ক্যানে স্ট্রোক ধরা না–ও পড়তে পারে। সিটি স্ক্যান করার পরে রোগীর ব্লাড সুগার পরীক্ষা করতে হবে। কারণ, অনেক সময় ব্লাড সুগার কমে গিয়েও স্ট্রোকের মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এরপর হার্টের অবস্থা বোঝার জন্য ইসিজি করতে হবে। এই তিনটা পরীক্ষা করলেই বোঝা যাবে, রোগীর আসলে স্ট্রোক হয়েছে কি না।
অনেক সময় সিটি স্ক্যান করেও যদি কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো না যায়, সে ক্ষেত্রে মাথার এমআরআই করতে হবে। রক্তনালির কোথায় স্ট্রোকের জরুরি চিকিৎসা করতে হলে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে হবে।
এবার স্ট্রোক দিবসে স্লোগান জানেন তো!
ভিডিও লিংক এখানে : https://youtu.be/Yoo465KpAyA
স্লোগান হল, ‘একসঙ্গে আমরা স্ট্রোকের চেয়ে বড়’।
স্ট্রোক প্রতিরোধ করতে আপনি কি করতে পারেন?
স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করুন। স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে এমন কারণগুলি এড়িয়ে যান।
স্বাস্থ্যকর খাবার খান
স্বাভাবিক ওজন বজায় রাখুন।
শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকুন।
ধূমপান ত্যাগ করুন এবং অ্যালকোহল সেবন সীমিত করুন।
রক্তচাপ, চিনি এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
আপনার যদি কোনো হৃদরোগ থাকে তবে তা নির্ণয় করে চিকিৎসা নিন।
আপনি কোনও ওষুধ খেলে তা নিয়মিতভাবে খাবেন।
প্রতিবেদক : বর্ণা ভট্টাচার্য