আমুদরিয়া নিউজ : বইয়ের পাতায় পড়েই হোক কিংবা কারোর কাছে শোনাই হোক আমরা সবসময় নতুন কোনও বিষয় জানার জন্য এক পায়ে রাজি থাকি। আচ্ছা, আজ যে ভারতে এত এত মহিলা ডাক্তাররা পুরুষ ডাক্তারদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রোগীদের সারিয়ে তোলা কিংবা জীবন বাঁচানোর মতো কাজ করছেন, আপনারা কি জানেন প্রথম বাঙালি মুসলিম মহিলা ডাক্তার কে ছিলেন?
জোহরা বেগম কাজি প্রথম বাঙালি মুসলিম মহিলা চিকিৎসক। তাঁর জন্ম ১৯১২ সালে অবিভক্ত ভারতের মধ্যপ্রদেশের রাজনান গ্রামে। তাঁর বাবার বাড়ি ছিল বাংলাদেশে। তিনি ১৯২৯ সালে আলিগড় মুসলিম মহিলা স্কুল থেকে প্রথম বাঙালি মুসলিম হিসাবে এসএসসি পাশ করেন। ২৩ বছর বয়সেই তিনি দিল্লির লেডি হার্ডিঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ থেকে ১৯৩৫ সালে প্রথম স্থান অধিকার করে এমবিবিএস পাশ করেন। সে জন্য তিনি পুরস্কার হিসেবে ভাইসরয় পদকও পেয়েছিলেন।
এমবিবিএস ডিগ্রি পেয়ে তিনি প্রথমে ইয়োথমাল ওমেন্স পাবলিক হাসপাতালে ডাক্তার হিসেবে যোগ দেন। এরপর বিলাসপুর সরকারি হাসপাতালে যোগ দেন। মানুষের সেবার জন্য মহাত্মা গান্ধী সেবাগ্রাম বানিয়েছিলেন৷ জোহরা সেখানে বেতন ছাড়াই চিকিৎসা করতেন। এ ছাড়াও তিনি ভারতের বিভিন্ন বেসরকারি ও সরকারি হাসপাতালে ডাক্তার হিসেবে নিঃস্বার্থ ভাবে কাজ করেছেন।
বঙ্গভঙ্গের পর তিনি ঢাকায় চলে যান। ১৯৪৮ সালে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজে যোগ দেন। হাসপাতালে কর্মরত অবস্থায় অবসর সময়ে তিনি সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে সাম্মানিক কর্ণেল হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন। মিটফোর্ড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (বর্তমানে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল) এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিভাগের প্রধান ও সাম্মানিক অধ্যাপিকা ছিলেন।
১৯৭৩ সালে চাকরি থেকে অবসর নিয়ে বেশ কিছু বছর হোলি ফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট হাসপাতালে পরামর্শক হিসাবে চিকিৎসা করতেন। পরবর্তীকালে তিনি বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজে সাম্মানিক অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন। তিনি বাংলাদেশের একাধিক নারীর মধ্যে চিকিৎসা নিয়ে থাকা কুসংস্কারকে দূর করেছিলেন। তাঁর অনুপ্রেরণায় ভারত ও বাংলাদেশের বহু নারী চিকিৎসা নিয়ে পড়াশোনা করে ডাক্তার হন। ২০০৭ সালে এই মহান মহিলা ডাক্তার প্রয়াত হন।