আমুদরিয়া নিউজ : কমেডি কার না প্রিয়। আমাদের দুঃখ, কষ্ট, চিন্তা এক নিমেষেই ভুলিয়ে দেয় যেকোনো কমেডি অর্থাৎ হাসির ভিডিও। সিনেমা জগতের কিংবা রিয়েলিটি শো-এর কমেডি সিন কিংবা, তাবর তাবর কমেডিয়ানদের হাসির ভিডিও দেখতে সকলেই ভালবাসেন। কিন্তু একবার ভেবে দেখুন তো যারা আমাদের রোজ হাসিয়ে বেড়ায়, আমাদের সব দুঃখ কষ্ট এক চুটকিতেই ভুলিয়ে দেয় তাঁদের জীবনটাও কি তাঁদের মতই রসিক। না, তাঁদের জীবনের চূড়ান্ত কষ্টের সময়েই তাঁরা মানুষকে হাসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজ আপনাদের এমনই একজন কমেডিয়ানের কথা বলব। যদিও তিনি কোনও রিয়েলিটি শো কিংবা মুভি করেননি। তিনি ইউটিউবে কমেডি ভিডিও করেই মানুষের মন জয় করেছেন।
শাদাব হাসান জাকাতি। আপনারা অনেকেই ওনার কমেডি ভিডিও ইউটিউবে দেখে থাকবেন। আর যদি না দেখে থাকেন তাহলে ঝটপট ইউটিউবে তাঁর নাম সার্চ করে দেখে নিন। একদিন যেই চ্যানেল শূন্য সাবস্ক্রাইবার দিয়ে শুরু হয়েছিল আজ সেই চ্যানেল ৩০ লক্ষ ৮৩ হাজারের একটা বড় পরিবার হয়ে দাঁড়িয়েছে। শাদাব জাকাতি উত্তরপ্রদেশের চোলি গ্রামে থাকেন। প্রায় ১০ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি ইউটিউবে ভিডিও বানাচ্ছেন।
প্রতি বছর ভারত থেকে প্রায় বহু লোক সৌদি আরবের মত বিভিন্ন দেশে কাজের খোঁজে চলে যান। তেমনই একজন ছিলেন শাদাব। কিন্তু, প্রায় ১২ বছর আগে সৌদি আরবে গিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতা খুবই খারাপ ছিল। যেভাবে সেখানে থাকা ভারতীয়রা নানা কষ্ট সহ্য করে কাজ করছিল সেটা তাঁর মনকে ভেঙে দেয়। তিনি নিজেও বেশি দিন কাজ করতে পারেননি। আর এই কষ্টই তাঁর মাথায় একটা বুদ্ধি এনে দেয়। সেখান থেকেই শুরু হয় ইউটিউবার শাদাব জাকাতির নতুন জীবন। তিনি ভারতে এসে অন্যরকমের কিছু কাজ করার প্ল্যান করেন। আর তখনই ইউটিউবের কথা তাঁর মাথায় আসে। তিনি প্রথম প্রথম অনুপ্রেরণামূলক ভিডিও বানাতেন। সেই ভিডিও গুলিতে মোটামুটি ভিউ আসতো। এবার তিনি বুঝতে পারলেন মানুষের জীবনে এত কাজ, কষ্ট, চিন্তার মধ্যে তাঁদের মনের হাসিটা যেন কোথাও হারিয়ে যাচ্ছে। বলে রাখা ভাল তাঁর ইউটিউব চ্যানেলের শুরুটাও কিন্তু সহজ ছিল না। তিনি একটা দুটো করে কমেডি ভিডিও বানাতে শুরু করেন। নানা জায়গায় ঘুরে ঘুরে তিনি ভিডিও বানাতেন এবং এখনও তেমন করেই বানান। তাঁর ভিডিও এবার মানুষ পছন্দ করতে শুরু করে। ১ হাজার, ২ হাজার থেকে শুরু করে আজ তাঁর ভিডিও গুলিতে লক্ষ লক্ষ ভিউ ও লাইক আসে। যেদিন ইউটিউব থেকে তিনি প্রথমবার টাকা পান সেদিন একটি নর্মাল ভিডিও পোস্ট করে তিনি তাঁর সকল ভারতীয় ভাইবোনদের ধন্যবাদ জানান। এরপর তাঁর জীবনের চাকা আরও এগিয়ে যায়। প্রথমে সিলভার প্লে বাটন ও তারপর গোল্ডেন বাটন তাঁর বাড়িতে আসে।
এখানেই শেষ নয় এবার তো আরও অবাক হবেন। তাঁর কাহিনী শুনলে অনুপ্রেরিত হবে না এমন কেউ নেই। আজকের তারিখে ইউটিউব থেকে তিনি যেই টাকা পান তাঁর কিছুটা দিয়ে তিনি অনাথ মানুষদের খাবার ও জামাকাপড়ের ব্যবস্থা করে দেন। বহু মানুষ তাঁর সাথে দেখা করতে যান। তিনি জানান তিনি সবসময় চেয়েছিলেন ভারতের মানুষদের জন্য কিছু ভাল করতে, তাঁদের আনন্দ দিতে আর তাঁর জীবনের খারাপ সময় ও ইউটিউবই তাঁকে সেই রাস্তা দেখিয়েছে। তিনি সকলের উদ্দেশ্যে বলেছেন, জীবনে যখনই মনে হবে এটা আমার সবচেয়ে খারাপ সময় যাচ্ছে তখন সেই খারাপ সময়কেই নিজের সবচেয়ে বড় শক্তি বানিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।